এখন এখানে কেউ চেনে না আমাকে। দূর প্রান্তে প’ড়ে আছি
পালকের গৌরববিহীন ঈগলের মতো একা; যে সেতারে
প্রত্যহ উঠত বেজে রঙধনু, রৌদ্র-জ্যোৎস্না, স্বপ্ন সমুদয়,
তাকে স্পন্দনের দ্যুতি নেই। ভূলুণ্ঠিত,
আরশোলা নিত্যদিন। মাঝে-মধ্যে আমার ক্ষণিক
দৃষ্টিপাত, নিদ্রাতুর; চোখ
ফেটে পানি; বুকজোড়া হু হু দীর্ঘশ্বাস।
একদা মাথায় হাত রেখেছেন অনিন্দ্য ফেরেশ্তাগণ স্নেহে,
আজ তারা কোথায় উধাও? কী আমার
অপরাধ? কেন রুক্ষ আক্রোশে তিমিরে ছুঁড়ে ফেলে
আমার পরীক্ষা নিতে দিলেন গা’ ঢাকা
মেঘ-বাগিচায়? হায়, তবে কি নিষ্ঠুর,
আফলা জমিনে
ফসলের যৌবন আনার ব্রত এখন আমার? জলধারা
নেই, বুঝি তাই দিনরাত্রি এই শোণিত সিঞ্চন।
বর্বরের হুঙ্কারে, দাপটে ওষ্ঠাগত প্রাণ, প্রিয়
সুহৃদেরা বহুদূরে। বাচাল বৃদ্ধের
তিরস্কার জোটে নিয়মিত; স্বেচ্ছাচারী তরুণেরা
দেবে অর্ঘ অকাতরে, করি না প্রত্যাশা। আত্মলোপী
ঈগলের আচরণে নিভৃত চূড়ায়
আমৃত্যু থাকতে হবে নৈঃসঙ্গ্যের হিমেল ঝাপটে;
বেলাশেষে এই দন্ড সহজে নিয়েছি মেনে; রূঢ়
প্রত্যাখ্যানে অচঞ্চল, বিনম্র বিবাগী।
১২।১।৯১