পুনরাবিষ্কার

বেশি নয়, এই কিছুদিন থেকে হয়েছে কী জানেন, ঘন্টার
পর ঘন্টা আমি চেয়ে থাকি জানালার
বাইরে, আমার চোখে পড়ে
কত কিছু-একটা বেড়াল রোদ পোহায়, হাওয়ায় মৃদু নড়ে
আকন্দগাছের পাতা, পাখি
এসে বসে ছাদের কার্নিশে আর কে লোক একাকী
পথ হাঁটে, কেউ
অনেক পুরানো গান গেয়ে চ’লে যায়, অথচ জাগে না ঢেউ
মনের অগাধ জলে। দুটি চোখ বুজে,
কিছুক্ষণ বুঝে
নিতে চাই, কোনো অপরূপ ছবি ফোটে কিনা অন্ধকারে, শুধু
তিমিরের মরুভূমি দোর-আঁটা চোখে জ্বলে ধু ধু।

এই তো সেদিনও কাটা ঘুড়ি
হাওয়ায় ভাসার ছন্দে দুলে দুলে যাচ্ছে দেখে তুড়ি
মেরেছি মনের সুখে। কেউ চোখ তুলে
তাকালে সুহাস কোনো আঙ্গিকে, হৃদয় রঙ বেরঙের ফুলে
গেছে ছেয়ে লহমায়। কী-যে
হলো, আজ মেঘলা বেলায় চিল ডেকে উঠলেও চোখ ভিজে
ওঠে না আমার। দশদিক থেকে দশজন এসে
কাঁধে হাত রেখো, দিব্যি হেসে
বোঝায় বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে ছড়িয়ে হাজার
পুথির ধুসর গন্ধ, ‘এটা তো ভালোই হলো, বারংবার
তুমি আর বেহুদা যাবে না
ভেসে আবেগের তোড়ে কুটোর ধরনে। হাস্নাহেনা
বাগানে ফুটেছে থরে থরে ব’লে আর
তুমি বাজবে না, যেন বেলায়েত খানের সেতার।
ওদের অমন প্রবোধের শুকনো খড়
মনে হলো বাস্তবিক গাড়লের ফিচেল রগড়।
কিছুটা আশ্বস্ত হতে জমকালো ডিগ্রী-খচিত সমাজে ছুটে
যাই বিদ্যাপীঠে পান্ডিত্যের ভারানত ধীমানেরা নখ খুঁটে,
চোখ পিটপিট ক’রে বলেন তাতে
জ্ঞানরাজ্য আমার দৃষ্টিতে ভেসে ওঠে বিলক্ষণ। মধ্যরাতে
বাতি জ্বেলে গ্রহ্ন থেকে সে-জ্ঞানের কণা
কিছু কিছু করা যায় আহরণ শুধু সে-সঞ্চয়ে কোনোদিন পারবো না
তৃপ্ত হতে। বহু ভেবে, দেখেছি যাচাই
ক’রে বহু কিছু, আমি আমার বিস্ময়বোধ ফিরে পেতে চাই।

অকস্মাৎ রাস্তায় বেরিয়ে দেখি একটি বালক
সাবানের রঙিন বুদ্বুদ নিয়ে মেতে আছে খেলায় নিছক,
আর কোনো কিছুর দিকেই নেই তার
খেয়াল, অবাক হয়ে ভাবি, জ্ঞানের ভান্ডার
নিয়ে যাঁরা অনেক উঁচুতে সমাসীন,
তাঁরা এই দীন
অভাজনটিকে পারেন নি যা দিতে, পথের
ক্রীড়পরারণ সে-বাকল দাতা তার চেয়ে ঢের
বেশি দিয়ে আমাকে তন্ময়
করে দিলো, উজাড় বাগানে ফোটে নিরিবিলি অজস্র বিস্ময়।

এ ক’দিন পরে কী জানেন, পুনরায় আমি বালকের মতো
এক রঙধনু থেকে অন্য রঙধনুর মন্ডলে ক্রমাগত
লাফ দিয়ে যেতে
পারি। পারি গৃহবলিভুকদের নিয়ে মেতে
থাকতে অনেকক্ষণ, কারো গাঢ় চোখ
চোখের পলকে দিতে পারে আমাকে আনন্দলোক।।