ইদানীং এদিক সেদিক দৃষ্টি মেলে মনে হয়,
জীবনের গোধূলিবেলায় দৃশ্যাবলি
কী রকম যেন
ওলটপালট, বিদঘুটে মনে হয়। আশেপাশে গাছপালা
বেশি নেই। দু’চারটি চোখে পড়ে বটে, কিন্তু ওরা,
মনে হয়, কী ভিষণ ক্ষেপে আছে, যেন বা এখুনি
দাঁত, নখ খিঁচিয়ে আসবে তেড়ে। মানুষের অবহেলা,
উৎপীড়ন, সীমাহীন অত্যাচার সহ্যাতীত ঠেকছে এখন
বৃক্ষ-সমাজের। বৃক্ষহীনতায় মনুষ্যসমাজ লুপ্ত হবে-
এই সত্য বিস্মৃতির ধোঁয়াশায় দ্রুত ঠেলে দিয়েছে মানুষ।
যদি বলি, বহুদিন থেকে হারাম রাতের ঘুম
আমার, দিনেও নিদ্রাহীন রক্তচক্ষু নিয়ে থাকি
বহুমুখী সমস্যার খোঁচা খেতে খেতে,
তা’হলে হবে না সত্যকথনের এতটুক অপলাপ। চোখ
জ্বালা করে সারাক্ষণ, কী এক বেজায় হিংস্র পাখি
ক্রমাগত ঠোকরাতে থাকে
বিভিন্ন প্রহরে; মগজের, হৃৎপিণ্ডের
রক্তক্ষরণের চাপে ম্রিয়মাণ হতে থাকি।
দর্পণে দেখি না মুখ ইদানীং, পাছে কোনওদিন
নিজেরই চেহারা দেখে ভয়ের খপ্পরে
পড়ে যাই। প্রতিদিন নিজের সঙ্গেই লুকোচুরি
খেলি বাস্তবের মুখ-ভেঙচি এড়ানোর প্রত্যাশায়
স্মৃতি আজকাল বড় বেশি প্রতারণা করে, ধু-ধু
মরুভূমি রূপে এই আজকের আমাকে নিয়ত
নিয়ে যায় শূন্যতায়। ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকি শুধু
এদিক সেদিক, কোথায় যে
আছি, নিজ আস্তানায় না কি কখনও না-দেখা অন্য
কোনও স্থানে, বুঝতে পারি না। এক ঝাঁক কালো পাখি
মাথার উপরে বহুক্ষণ ঘুরপাক খেতে খেতে
অতি দ্রুত কখন যে কোথায় হঠাৎ
নিমেষে মিলিয়ে যায়, বুঝতে না পেরে
ধন্দে পড়ে যাই; হায়, কেমন অচেনা লাগে নিজেকে তখন।
মাঝে মাঝে এমন বিহ্বল হয়ে পড়ি,
বিছানায় গড়াগড়ি কিংবা টেবিলের পাশে চেয়ারের কোলে
বসে থাকা বড়ই অসহ্য বোধ হয়। আচানক
উঠে পড়ি, পায়চারি করি কিছুক্ষণ, ভাবনার
এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। শেল্ফে সাজানো
বইগুলো আমার ব্যর্থতা পাঠ করতে করতে এ রকম
মূক হয়ে থাকে, যেন শব্দের ভাণ্ডার
সব লুট হয়ে গেছে সুচতুর তস্করের গায়েবি কৌশলে।
বহুরূপী বঞ্চনার ঘূর্ণিবাতে পড়েও যে টিকে
আছি, মাঝে মাঝে অকস্মাৎ
সুরের ঝলক এসে আমাকে করায় স্নান আর কোনও
কবিতার পঙ্ক্তিমালা পৌঁছে দেয় কোনও অলৌকিক
ঠিকানায়, তখন ভাগ্যকে কৃতজ্ঞতা
জানাই নীরবে, চেয়ে থাকি বেধড়ক
কাটা-পড়া বৃক্ষ-সমাজের দিকে। আমার জানালা
দিয়ে ক্ষয় রোগীর মতোই চাঁদ প্রবেশের পথ
কিছুতে পায় না খুঁজে। আমি নিদ্রাহীন, স্বপ্নহীন রাত
কাটাই নিজের ছোট ঘরে খুব পায়চারি করে।
২৫-৩-২০০৩