না হয় আমি ঘুমের ঝোঁকে বলেইছিলাম,
‘বিদায় বলি, কথা হবে কাল সকালে’।
‘সকাল বেলা?’ প্রশ্নে তোমার কী যে ছিলো,
তারপরে তো শুনি না আর তোমার গলা।
নাম জানি না, ধাম জানা নেই, কেবল চিনি
জ্যোৎস্না-জ্বলা কণ্ঠস্বরের ঢেউয়ের খেলা।
কোন নিবাসে তোমাকে আজ খুঁজবো বলো?
কাকে শুধাই, ‘তুমিই কি সেই স্বরময়ী?
যখন পথে চলে আমার আসা-যাওয়া,
তখন যাকে লাগে ভালো, নেচে ওঠে
চোখের তারা, হঠাৎ ভাবি- এই তো তুমি।
ভীষণ উদাস দৃষ্টি হেনে যায় সে চলে।
তোমার স্বরের জলতরঙ্গ শোনার আশায়
কাক-ডাকা ভোর, দুপুর এবং সন্ধেবেলা
টেলিফোনের ধারে আমার সময় কাটে;
ঘুমছুট কতো রাত্রে লাগে ভোরের আবীর।
সাধ ছিলো দূর নদীর বুকে ভাসবো ভেলায়,
সঙ্গে আমার থাকবে তুমি মুখোমুখি।
অস্তগামী সূর্য তোমার চোখে মুখে,
খোলা চুলে বুনবে অসীম কল্পকথা।
সেই দূরাশা এক পলকে অস্তমিত,
ধসে-পড়া বাড়ির মতো প’ড়ে আছি,
আমার ওপর মরা চাঁদের কান্না ঝরে,
নিষ্ঠুরতা বুঝি তোমার সহোদরা।
বিস্মরণের ডোবায় যদি ছুড়েই দেবে,
তবে কেন রাত দুপুরে জাগিয়েছিলে?
শুধু আমার সত্তা-ভিতে ছুঁইয়ে দিতে
ভুল প্রহরের মধুর স্বরের ক্ষণিক মায়া?
রাতের শিরায় কী আছে এক মদিরতা,
যার তাড়না যোগায় ভাষা তোমার প্রাণে।
দিন-দুপুরে কুলুপ এঁটে রাখো মুখে,
এখন দেখি রাতও দগ্ধ কথার খরায়।
আমার স্মৃতি দেয় কি হানা তোমার মনে
কফি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে? কিংবা যখন
খাতার পাতায় খামখেয়ালি আঁচড় কাটো?
অথবা টিপ বাছাই করার ব্যস্ত বেলায়?
আমার বুকে আর্ত কোকিল নীড় বেঁধেছে;
কণ্ঠে রক্ত তুলে বলে বারে বারে,
‘টেলিফোনে উঠুক বেজে তোমার গলা,
কেবল আমি এটুকু চাই, আর কিছু নয়?’
হৃদয় জুড়ে স্বেচ্ছাচারী অস্থিরতা
ওড়ায় ধূলো; কোথাও আমার মন বসে না।
গ্যালী-দাসের মতোই আমি আষ্টেপৃষ্ঠে
বন্দী হয়ে দাঁড় টেনে যাই স্মৃতির জলে।