বারবার ঘোষকের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, ‘সুধীবৃন্দ,
একটি নাটক হবে মুক্তাঙ্গনে, একটু অপেক্ষা
করুন নিঃশব্দে ধৈর্য ধরে; দয়া করে
কোনো বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি করবেন না; কোনো ভাংচুর যেন
না হয় এখানে। আমাদের নায়কের
সুলুক সন্ধান
এখনও মেলেনি, ফলে নাটকের কাজ
শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। আরও কিছুক্ষণ দর্শকণ্ডলী
আমরা আপনাদের একান্ত সহযোগিতা চাই।
সাজঘরে ধড়াচূড়ো সবই আছে ঠিকঠাক, চোগা
চাপকান, গলার মুক্তোর মালা, টুপি কিংবা তাজ
অথবা সাফারি স্যুট, বুট
কিছুরই কমতি নেই; রয়েছে গচ্ছিত, শুধু আজ নায়কের দেখা নেই,
এ তল্লাটে কোথাও নায়ক নেই কোনো।
যারা মুখ্য পাত্রপাত্রী নয়,
তারা যার যে রকম ইচ্ছে মাঝে-মাঝে
নাটকের কিঞ্চিৎ মহড়া দিচ্ছে আর নিজ নিজ গরিমার
রোদ পোহানোর
ফাঁকে ফাঁকে দর্শকের চোখের সম্মুখে
ফেলছে ধোঁয়ার জাল। এরকম শান্ত, আলাভোলা
দর্শক কখনো
কোথাও দ্যাখেনি কেউ। নায়ক বেপাত্তা
জেনেও তাদের মধ্যে কেউ
টুঁ শব্দটি করছে না। বেড়ালের ডাক নেই, তীক্ষ্ণ সিটি নেই;
পচা ডিম অথবা টোমাটো
শূন্যমঞ্চে ছুড়ছে না কেউ। মনে হয় থমথমে গোরস্থান।
এরকম ভাবলেশহীন যারা, তারা
হয় মৃত,
নয়তো কলের পুত্তালিকা সব, হঠাৎ যাদের
ফুরিয়ে গিয়েছে দম। হ্যাজাক জ্বালানো
হয়েছে সে কবে,
নায়কের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে না এখনও।
সময় ঠোকর দিচ্ছে ক্রমাগত যেরকম গাছে
দ্যায় কাঠঠোকরা; অধিকারী
দিশি মদে চুর, প্রম্পটার নেপথ্যে ঝিমোয় আর
নোংরা ড্রেন, ঝোপঝাড়, ডোবা থেকে-আসা ঝাঁক ঝাঁক
মশা ভণে নাট্যকথা অমৃত সমান
এ ভবের হাটে। দিন যায়, রাত কাটে, দর্শকেরা
সেই কবে থেকে অসহায়
প্রতীক্ষায় আছে,
প্রতীক্ষায় আছে,
প্রতীক্ষায় আছে
কখন নায়ক এসে গৌরবের বেশে
স্তব্ধতাকে কাচের মতন
টুকরো টুকরো করে
অকস্মাৎ মুক্তাঙ্গনে ঝোড়ো বেগে প্রবেশ করেন।