জাঁদরেল সভাসদদের তিনি সুদূর কালের
সমাসীন মহারাজ ক্যান্যুটের মতো আচরণে
বল্লেন জলদমন্ত্র স্বরে, ‘মুছে ফেলো তার নাম।
কার নাম? একটি বিনীত প্রশ্ন সমুদ্রের ঢেউয়ের ধরনে
সন্ত্রমে লুটিয়ে পড়ে তাঁর চকচকে
জুতমোড়া পায়ে।
‘কেন, সেই বেয়াড়া কবির, রাত্রিদিন আজেবাজে বকা যার
মুদ্রাদোষে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি; তাড়াও
নাম তার দেশের উত্তর
দক্ষিণ পশ্চিম পূর্ব কোণ থেকে’ ব’লে
কফির পেয়ালা তিনি আয়েশী ভঙ্গিতে
ঠোঁটে ছোঁয়ালেন।
শক্তিধর যিনি, দশ দিকব্যাপী যাঁর রবরবা
হুকুম তামিল হ’তে তাঁর
হয় না বিলম্ব ক্ষণকাল। ঢাকঢোল না পিটিয়ে
সাজিয়ে সহিস ঘোড়া খুব চুপিসাড়ে
শুরু হলো কাজ,
যেমন দেয়াল থেকে রাত্রির রোমশ অন্ধকারে
মুছে ফেলা হয়
সাত তাড়াতাড়ি দ্রোহী অমোঘ লিখন।
অথচ শহরে গাছপালা ঘন ঘন মাথা নেড়ে
করে প্রতিবাদ,-
‘এ কবি করেছে স্তব আমাদের কতদিন। নাম
তার আমাদের ডালে ডালে
পাতায় পাতায়
থাকবে প্রবল লেখা, রোদে পুড়বে না,
যাবে না বর্ষার জলে ধুয়ে।
ফুটপাত বলে,
এ পথে হেঁটেছে কবি দীর্ঘকাল, তার নাম থাকবে আমার
বুকে আঁকা। আহত কোকিল
ভীষণ চমকে দিয়ে পথচারীদের ডেকে ওঠে-
‘পারো তো আমার কণ্ঠ থেকে
উত্তপ্ত সাঁড়াশি দিয়ে এক্ষুণি উপড়ে ফেলো তার
নাম, যে আমার সুর খাতার পাতায়
তুলে নিয়ে বাজায় স্বতন্ত্র সুর নিদ্রাহীন রাতে বড় একা।
কতিপয় নাগরিক, বিভিন্ন বয়েসী, পৌরপথে
আলাপ করেন পরস্পর, ‘আচ্ছা, বলো দেখি, জনসাধারণ
যে কবির পথে হৃদয়ের সূর্যোদয়ের গালিচা পেতে
রাখে, তার নাম মুছে দেবে,
কে এমন শক্তি ধরে আমাদের এই পৃথিবীতে?’