মিশে গেছে অনেক শতাব্দী মরুভূমির হাওয়ায়,
বঙ্গোপসাগরে বয়ে গেছে বহু শতকের ঢেউ,
তোমার আমার দেখা হয়নি দীপিতা! কতকাল
আরব উদ্বাস্তু হ’য়ে শহরের আনাচে-কানাচে
ঘুরেছি ভীষণ অনাশ্রয়ে,
বিস্মৃতির বাগানের ঘ্রাণ মাঝে মাঝে
চোখের পাতায় রুয়ে দিয়েছে ধূসর
নিদ্রা কাতরতা,
কখনো কান্নায় চোখ বেরিয়ে এসেছে। হৃদয়ের
জখমের নীরবতা কতবার হয়েছে বাঙময় গানে গানে।
মনে পড়ে, কাগজের চাঁদ বানিয়েছি অমাবস্যা
রাতে আর মনোনীত জ্যোৎস্না দিয়ে রচেছি হরিণ
পদ্যের ভেতর,
একটানা ডেকে যাওয়া কোকিলের বুকে
নির্ভুল দিয়েছি গেঁথে আমার নিজস্ব পংক্তিমালা,
টাঙিয়ে দিয়েছি কত গাথা পরিত্যক্ত বাড়িটার
দেয়ালে দেয়ালে, তুমি ‘কী সুন্দর’ ব’লে
দিয়েছো বাহবা। শীত রাতে
ফুটেছে কদম ফুল বালিশের ওয়াড়ে আমার,
যখন এসেছো তুমি রঙধনু সাঁকোটা পেরিয়ে
চুপিসাড়ে স্বপ্নের কী স্বচ্ছ অপরূপ
শাল মুড়ি দিয়ে।
কেউ না বল্লেও হৃদয়ের তন্তজাল জেনে গেছে
কখন এসেছো তুমি ফিরে। দেখছো না
শহরের চেহারা কেমন পাল্টে গেছে লহমায়?
দ্যাখো, লালবাগের কেল্লার
অতি পুরাতন জীর্ণ দেয়াল মায়াবী
গলায় গাইছে দীপিতার শুদ্ধ প্রত্যাবর্তনের রূপময়
খেয়াল, মাঘের শীতে ফুটেছে কনকচাঁপা আর
অন্ধ ভিখিরির
এনামেল পাত্তরের দশ পয়সাসমূহ পেয়ে
গেছে সুলতানী আমলের দিনারের
বর্ণচ্ছটা, রেডিও এবং টেলিভিশনের খুব
নিষ্ঠাবান সংবাদ পাঠক, ভাষ্যকার
আজ সত্য প্রচারে অত্যন্ত মশগুল,
ব্যর্থ কবি অকস্মাৎ লিখে ফেলেছেন দৈববলে
অমরতা-ছোঁয়া পংক্তিমালা, কারাগার থেকে সব
রাজবন্দী শেকল ভাঙার গান গাইতে গাইতে
ভায়োলিন হাতে
রাঙা মেঘে বেড়াচ্ছেন ভেসে, পাথরের সিংহগুলো
কী ক্ষিপ্র দৌড়াচ্ছে, পাঁচতারা হোটেলের বলরুমে
বাহারী ফ্যাশন্ন শো’তে দিয়েছেন যোগ ঢাকাই বস্তির যুবতীরা।
পুঁজিবাদী সমাজের নাকের তলায় অশ্বারুঢ়
লাল কমলের মতো অসি ঘোরাতে ঘোরাতে
কী দৃপ্ত সমাজতন্ত্র এসে গেছে কাঁধে
ঝুলিয়ে রঙিন লোকশ্রুত সূর্যোদয়।
কতকাল পরে
দীপিতা এসেছে ফিরে স্বপ্ন-স্মৃতিময় এ শহরে?