দানিয়েল ১১

১ মাদীয় রাজা দারিয়াবসের রাজত্ব কালের প্রথম বছরেই পারস্যের যুবরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি মীখায়েলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।
২ “‘এখন তাহলে দানিয়েল তোমাকে আমি সত্যটি বলব। পারস্যে আরও তিন জন রাজা শাসন করবে। এরপর আসবে চতুর্থ রাজা। সেই চতুর্থ রাজাই হবে পারস্যের সব থেকে ধনী রাজা। খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য সে তার ধনসম্পদ ব্যবহার করবে। এবং গ্রীস রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য সে সকলকে ইচ্ছুক করে তুলবে।
৩ তখন এক জন শক্তিশালী ও বিত্তবান রাজার আবির্ভাব ঘটবে। সে আরো শক্তি দিয়ে শাসন করবে। সে যা চাইবে তাই করতে সক্ষম হবে।
৪ সেই রাজার আবির্ভাবের পর তার রাজ্য চার ভাগে বিভক্ত হবে। তার ছেলেমেয়েরা ও নাতিনাতনিরা তার রাজত্বের ভাগ পাবে না এবং তার রাজ্যগুলি তাদের পুরোনো শক্তি ফিরে পাবে না। কারণ তার রাজ্যের অংশীদার হয়ে উঠবে অন্য মানুষেরা।
৫ “‘দক্ষিণ দেশের রাজা বলবান হয়ে উঠবে। কিন্তু তারই এক জন অধ্যক্ষের হাতে তার পরাজয় ঘটবে। তখন সেই অধ্যক্ষই শাসন করতে শুরু করবে। তার রাজ্য হবে একটি খুব শক্তিশালী রাজ্য।
৬ “‘কিন্তু কয়েক বছর পরে তাদের দুজনের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হবে। চুক্তিটি প্রতিপন্ন করবার জন্য দক্ষিণ দেশের রাজার কন্যা যাবে উত্তর দেশের রাজপুত্রকে বিয়ে করতে। ঘটনাবশতঃ তাকে এবং তার ভৃত্যবর্গ যারা তাকে এনেছিল, তার সন্তান এবং সেই এক জন য়ে তাকে সাহায্য করেছিল তাদের সবাইকে প্রতারণা করা হবে।
৭ “‘কিন্তু ঐ যুবরাণীর পরিবারের এক ব্যক্তি এসে দক্ষিণের রাজার স্থান গ্রহণ করবে। ঐ ব্যক্তি উত্তরের রাজার সৈন্যবাহিনীকে আক্রমণ করবে। সে উত্তরের রাজার দুর্গে প্রবেশ করে যুদ্ধে জয়লাভ করবে।
৮ সে তাদের দেবতার মূর্ত্তি নিয়ে যাবে। এরপর সে আর উত্তরের রাজাকে উত্যক্ত করবে না।
৯ উত্তরের রাজা আবার দক্ষিণের রাজধানী আক্রমণ করবে কিন্তু পরাজিত হয়ে পুনরায় নিজের রাজ্যে ফিরে যাবে।
১০ উত্তরের রাজার পুত্ররা এবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে। তারা একটি বিশাল সেনাবাহিনী সংগঠিত করবে। সেই সেনাবাহিনী বন্যার মতো দ্রুত পথ পরিক্রম করবে। তারা দক্ষিণের রাজার দুর্গ আক্রমণ করবে।
১১ তখন দক্ষিণের রাজা রুদ্ধ হয়ে উত্তরের রাজাকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে বের হবে। উত্তরের রাজার বিশাল সেনাবাহিনী থাকবে, কিন্তু সে দক্ষিণের রাজার সৈন্যবাহিনী দ্বারা পরাজিত হবে।
১২ বিরাট সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করবার পর দক্ষিণের রাজা গর্বিত হবেন এবং তিনি লক্ষ লক্ষ সৈন্য হত্যা করবেন, কিন্তু তিনি ক্ষমতাশালী থাকবেন না।
১৩ কারণ এরপর উত্তরের রাজা আবার আগের চেয়েও আরও বিশাল সেনাবাহিনী প্রস্তুত করবে। কয়েক বছর পর আবার সে তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে আক্রমণ করবে। এই সৈন্যবাহিনী হবে অজস্র অস্ত্রধারী। তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
১৪ “‘সেই সময় অনেক লোক দক্ষিণের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। তোমার নিজেরই কয়েক জন লোক যারা যুদ্ধ করতে ভালবাসে তারা য়োগ দেবে এবং দক্ষিণের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। তারা স্বপ্নদর্শনকে সত্য করে তুলতে চেষ্টা করবে, কিন্তু তারা যুদ্ধে জয়লাভ করবে না।
১৫ এরপর উত্তরের রাজা আসবে এবং একটি শক্তিশালী শহর অধিগ্রহণ করে নেবে। দক্ষিণের সৈন্যরা যুদ্ধে পুরোপুরি পরাস্ত হয়ে পড়বে। এমনকি দক্ষিণের বীর সৈন্যরাও তাদের শক্তি দিয়ে উত্তরের সৈন্যদের ঠেকাতে পারবে না।
১৬ “‘উত্তরের রাজা যা খুশী তাই করতে পারবে। কেউ তাকে থামাতে সক্ষম হবে না। তার হাতে সুন্দর দেশটির ক্ষমতা থাকবে। এবং এই দেশ ধ্বংস করার মতো যথেষ্ট শক্তি তার হাতে থাকবে।
১৭ উত্তরের রাজা দক্ষিণের রাজাকে পরাজিত করবার জন্য তার রাজ্যের সমগ্র শক্তিকে আনতে স্থির করেছিল। দক্ষিণের রাজার সঙ্গে সে একটি চুক্তি করবে। এবং সেটা প্রতিপন্ন করতে তার এক কন্যাকে দক্ষিণের রাজার সঙ্গে বিয়ে দেবে। কিন্তু এই পরিকল্পনা কার্য়্য়কারী হবে না।
১৮ “‘এরপর উত্তরের রাজা সমুদ্র উপকুলবর্তী দেশগুলোর দিকে মনোয়োগ দেবে। যুদ্ধে বেরিয়ে সে বেশ কিছু শহর জয় করবে। কিন্তু এরপর এক জন সেনাধ্যক্ষ উত্তরের রাজার সমস্ত গর্ব চূর্ণ করে দেবে। সেই সেনাধ্যক্ষ উত্তরের রাজাকে লজ্জিত করে তুলবে।
১৯ “‘সেটি ঘটবার পর, উত্তরের রাজা পুনরায় তার নিজের দেশের দুর্গে ফিরে যাবে। কিন্তু সে দুর্বিপাকে পড়বে এবং মারা যাবে।
২০ “‘উত্তরের রাজার অপসারণের পর তার স্থানে এক নতুন শাসক উঠে আসবে। ঐ শাসক তার প্রজাগণের কাছ থেকে কর সংগ্রহের জন্য তার সহকারীদের পাঠাবে। কিন্তু কয়েক বছর পরেই সেই শাসক ধ্বংস হবে। তবে সে যুদ্ধে মারা যাবে না।
২১ “‘সেই শাসকের পর, আর এক জন নতুন শাসক হবে। ঐ শাসক হবে অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং হীণমন্য ব্যক্তি। ঐ ব্যক্তি রাজকীয পরিবারের সম্মান পাবে না। সে চাটুকারিতার কৌশল অবলম্বন করে শাসক হয়ে যাবে। সে এমন একটা সময় শাসক হবে যখন সেখানে শান্তি আছে।
২২ সে বিশাল সৈন্যবাহিনীকে, এমনকি চুক্তির নেতাকেও পরাজিত করবে।
২৩ অনেক দেশ সেই নিষ্ঠুর এবং ঘৃণ্য ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত করবে। কিন্তু তাদের সাথেও সে চাতুরী করবে। মিথ্য়ে বলে তাদের প্রতারিত করবে। সে শক্তি সঞ্চয় করবে কিন্তু সামান্য কিছু মানুষ তাকে সমর্থন করবে।
২৪ “‘সেই শান্তির সময়, সে ধনী দেশগুলিতে আসবে। তার পূর্বপুরুষরা যা করেননি এমন সব জিনিষ সে করবে। সে ধনী দেশগুলির শাসকদের বহু উপহার এবং মূল্যবান জিনিষ দেবে। সে তাদের দুর্গগুলি পরাজিত করবার পরিকল্পনা করবে। পরাজিত রাষ্ট্রগুলি থেকে সে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে এসে তার অনুগামীদের হাতে সেগুলি তুলে দেবে। দুর্ভেদ্য ও কঠিন শহরগুলিকেও পরাজিত করার পরিকল্পনা করবে ঐ শাসক। কিছু সময়ের জন্য সে সফল হবে।
২৫ “‘সেই অতি নিষ্ঠুর এবং ঘৃণ্য শাসকের বিশাল সেনাবাহিনী থাকবে। সে তার শক্তি দেখানোর জন্য ঐ সেনাবাহিনী নিয়ে দক্ষিণের রাজাকে আক্রমণ করবে। দক্ষিণের রাজাও এক বিশাল সেনাবাহিনী সংগঠিত করে যুদ্ধে ঝাঁপিযে পড়বে। কিন্তু রাজার বিরুদ্ধে থাকা কয়েক জনের গোপন পরিকল্পনায দক্ষিণের সেই যুদ্ধে রাজা পরাজিত হবে।
২৬ দক্ষিণের রাজার বন্ধুবেশী শএুরাই ষড়যন্ত্র করে তাকে যুদ্ধে পরাজিত করবে। দক্ষিণের রাজার অধিকাংশ সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাবে।
২৭ উভয় রাজাই পরস্পরের ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে। এক টেবিলে বসেও দুজন দুজনকে মিথ্যে কথা বলবে। কিন্তু তাদের মিথ্য়াগুলি তাদের কোন কাজেই আসবে না। কিন্তু ঈশ্বর ইতিমধ্যে তাদের অপসারণের সময় ঠিক করে রেখেছেন।
২৮ উত্তরের রাজা অনেক ধনসম্পদ নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাবে। তখন সে, যারা পবিত্র চুক্তি মানে তাদের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করবে এবং নিজের দেশে ফিরে যাবে।
২৯ “‘সঠিক সময় উত্তরের রাজা পুনরায় দক্ষিণের রাজাকে আক্রমণ করবে। কিন্তু এইবার সে আগের বারের মতো সাফল্য পাবে না।
৩০ পশ্চিম থেকে সমস্ত যুদ্ধ জাহাজগুলি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য ছুটে আসবে। সে পবিত্র চুক্তির বিরুদ্ধে ক্রোধ দেখাবে এবং যারা পবিত্র চুক্তি মানা বন্ধ করেছে তাদের সাহায্য করবে।
৩১ উত্তরের রাজা জেরুশালেমের মন্দির নষ্ট করতে তার সৈন্যবাহিনীকে পাঠাবে। মন্দিরে নিত্য নৈবেদ্য দিতে আসা লোকেদের সেনারা থামিয়ে দেবে। তারা মন্দিরের ভেতরে সেই ভয়ঙ্কর জিনিষটি রাখবে, য়েটি ধ্বংসের কারণ।
৩২ “‘উত্তরের রাজা ইহুদীদের দেখতে পাবেন যারা পবিত্র চুক্তির বিরোধী। তিনি তাঁর ভান, ছল-চাতুরী এবং অবিরাম মিথ্য়া দ্বারা তাদের সমর্থন পাবেন। কিন্তু য়ে সকল ইহুদীরা তাদের ঈশ্বরকেই শক্তিমান বলে বিশ্বাস করবেন তারাই শক্তিশালী হয়ে উঠে পুনরায় যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়ে উঠবে।
৩৩ “‘ঐ সকল জ্ঞানী শিক্ষক অন্যদের কি ঘটছে তা বোঝাতে সাহায্য করবে। কিন্তু এই ধর্মবিশ্বাসের জন্য তাদের নির্য়াতন সহ্য করতে হবে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জনকে তরবারির আঘাতে হত্যা করা হবে। কয়েক জনকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হবে এবং আরো কয়েক জনকে কারাগারে বন্দী করা হবে। তাদের মধ্যে কয়েক জনের ঘরবাড়ি লুঠ করা হবে।
৩৪ যখন সাধারণ লোক হোঁচট খায় তখন জ্ঞানী শিক্ষকরা অল্প সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েক জন, যারা তাদের সঙ্গে য়োগ দেবে তারা হবে কপটাচারী।
৩৫ কয়েক জন জ্ঞানী মানুষ হোঁচট খাবে এবং ভুল করবে। তারা শাস্তি পাবে, কিন্তু এটা তাদের ভালো লোক করে দেবে। কারণ যাতে তারা শেষ সময়ে নিজেদের খাঁটি, শক্তিশালী এবং ত্রুটিহীন করে গড়ে তুলতে পারে। তখন, সঠিক সময়, সেই সময়ের সমাপ্তি আসবে।”‘
৩৬ “‘উত্তরের রাজা যা চায় তাই করতে পারবে। সে নিজেই নিজের কাজের বড়াই করে বেড়ায়। সে নিজের প্রশংসায় নিজে এতোই অন্ধ য়ে নিজেকে সে ঈশ্বরের থেকেও বড় মনে করে। সে যা বলে তা আর কেউ কোনদিন শোনেনি। সে ঈশ্বর সম্পর্কে যা তা বলে বেড়ায়। যতক্ষণ পর্য়ন্ত না ঈশ্বর স্থির করবেন য়ে এই ভয়ানক সময় শেষ হবে, উত্তরের রাজা এ ব্যাপারে সফল হবেন। কারণ কি ঘটতে যাচ্ছে তা ঈশ্বর পূর্বেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
৩৭ “‘উত্তরের রাজা তার পূর্বপুরুষদের দেবতাদেরও মানবে না। স্ত্রীলোকদের কামনার দেবতার মূর্ত্তিকেও সে মানবে না। সে কোন দেবতাকেই গুরুত্ব দেবে না। সে শুধু নিজের গুণগান গেয়ে বেড়াবে আর নিজেকে সমস্ত দেবতাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে।
৩৮ উত্তরের রাজা দুর্গগুলির দেবতা ব্যতীত আর কোন ঈশ্বরের উপাসনা করবে না। কিন্তু উত্তরের রাজা দুর্গসমূহের দেবতাদের উপহারস্বরূপ সোনা, রূপা এবং মণিমানিক্য দেবে এবং তাঁকে সম্মান জানাবে। এই দেবতা তার পূর্বপুরুষদের অজ্ঞাত ছিল।
৩৯ “‘উত্তরের রাজা ঐ অজ্ঞাত বিদেশী দেবতার সাহায্য নিয়ে দৃঢ় দুর্গগুলিকে আক্রমণ করবে। অন্যান্য দেশের শাসকগণ তার সাথে য়োগ দিলে সে তাদের সম্মানিত করবে। সে তার অনেক প্রজাকে ঐ সকল শাসকদের সেবায় নিযোজিত করবে। শাসকদের পারিতোষিক হিসেবে অনেক জমিজমা দিয়ে দেবে।
৪০ “‘অবশেষে দক্ষিণের রাজা উত্তরের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। উত্তরের রাজাই তাকে আক্রমণ করবে। উত্তরের রাজা রথসমূহ, অশ্বারোহী মানুষ এবং যুদ্ধ জাহাজসমূহ দিয়ে আক্রমণ করবে। উত্তরের রাজার সৈন্যরা বন্যার জলের মতো প্রবাহিত হবে।
৪১ উত্তরের রাজা সুন্দর দেশকে আক্রমণ করবে। উত্তরের রাজার কাছে অনেক দেশ পরাজিত হবে। কিন্তু ইদোম ও মোয়াব এবং অম্মোন দেশের নেতৃবৃন্দ উত্তরের রাজার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
৪২ উত্তরের রাজা অনেক দেশ আক্রমণ করবে। এমনকি মিশরও উত্তরের রাজার হাত থেকে রক্ষা পাবে না।
৪৩ মিশরের সমস্ত সোনা, রূপো ও ধনসম্পদ তার হস্তগত হবে। লুবীয়রা এবং কূশীয়রা তার অনুচর হবে।
৪৪ কিন্তু পূর্ব ও উত্তর দেশ থেকে আসা খবর শুনতে পেয়ে উত্তরের রাজা ভীত হয়ে পড়বে এবং সে রাগ করবে। সে অনেকগুলি দেশকে পুরোপুরি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ক্রুদ্ধ হয়ে যাত্রা শুরু করবে।
৪৫ সে সমুদ্র ও সুন্দর পবিত্র পর্বতের মাঝখানে তার রাজকীয তাঁবু খাঁটাবে। কিন্তু শেষ পর্য়ন্ত ঐ নিষ্ঠুর রাজার মৃত্যু ঘটবে। তার মৃত্যুর সময় তাকে সাহায্য করার জন্য সেখানে কোন ব্যক্তি উপস্থিত থাকবে না।”‘