তোরঙ্গ

আমাকে একটি রঙিন তোরঙ্গে পুরে তালা লাগিয়ে
দিলে তুমি। অপরিসর তোরঙ্গে কোনওমতে
হাত-পা মুড়ে পড়ে ছিলাম। শ্বাস রোধ হয়ে
আসছিল আমার। সে কী যন্ত্রণা, বোঝানো যাবে না।
কেন যে তুমি আমাকে এভাবে আটকে রেখেছিলে, সেই
গূঢ় কথা আর কেউ না জানুক, আমার অজানা নয়।
মাঝে-মাঝে তোরঙ্গ খুলে আমাকে দেখতে, নিবিড়তম
চুম্বনে মাতাল করে তুলে প্রিয়তম বন্দিটিকে। আমার
শ্বাসকষ্ট অস্তমিত হতো কিছুক্ষণের জন্যে। আবার
বন্ধ নয়ে যেত রঙিন তোরঙ্গের ডালা।

রুদ্ধ তোরঙ্গে আমার ডাক আসতো মাঠের থৈ থৈ
সবুজ, আকাশময় নক্ষত্র-চুমকি, বর্ষারাতের প্রথম
কদম ফুল, আমার লেখা না-হাওয়া কবিতা আর
সবচেয়ে বেশি, তুমি বিশ্বাস করো আর না-ই করো,
তোমার বুদ্ধি ঝলসিত, লাবণ্যময় মুখের। তোরঙ্গ থেকে
আমার আহ্বান তোমার হৃদয়ে ঢেউ জাগাত কিনা
জানি না। তোমার স্বপ্নের ভেতর তুমি যে কখনও কখহও
অনিন্দ্য পুলকে ঈষৎ কেঁপে উঠতে, সে-তো আমারই নিঃশ্বাসে।
ঘুমভাঙা রাতে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে লক্ষ করলেই
দেখতে পেতে আমার নিঃশ্বাসের দাগ।

একদিন অতর্কিতে হারিয়ে ফেললে তোরঙ্গের চাবি।
চাবি হারিয়ে তুমি প্রায় উন্মাদিনী হয়ে গেলে আমার
পরিণামের কথা ভেবে। আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কায় তোমারই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল খুব।
দিশেহারা তুমি হাতুড়ির কড়া আঘাতে চুরমার
করে ফেললে তালা আর আমি বেরিয়ে এলাম, যেন
মৃত্যুপুরী থেকে অর্ফিয়ুস। উচ্ছ্বসিত ঝরণার মতো তুমি
জানলে, তপোবনপ্রতিম উদ্যান, খোলা হাওয়া, আকাশের
নীলিমা, লাল পদ্মময় দিঘির ঘাট, আর নদীতীরে যখন
থাকি, থকনই আমি তোমার হৃদয়ের অন্তরঙ্গতম বাশিন্দা।