মা, মা আমার, মা গো, কতদিন তোমার
কবরের কাছে যাই না আমার আশৈশব
সকল স্মৃতিকে আবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে,
আলিঙ্গন করার জন্যে। এই আবৃত্তি, এই আলিঙ্গনের
আকাঙ্ক্ষায় আমার সামান্য পুঁজি উজাড় করে
বাঁধিয়েছিলাম তোমার নশ্বর অস্তিত্বের অন্তিম
আশ্রয়, যে অস্তিত্বের কপাল আর হাত ছুঁয়ে
পা দু’টি চুম্বন করে শান্তি পেয়েছি বহুবার।
আম্মা, অথচ কতদিন যাই না কবরস্থানে। কখনও
বৃষ্টিবাদল, কখনও নিহত হওয়ার আশঙ্কায়,
কখনওবা কুকুরের জিভ-বের-করা দৌড়ের মতো
ব্যস্ততা, হায়, তোমার অযোগ্য পুত্রের নিরর্থক, শোচনীয়
ব্যস্ততা আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। তোমার কবরের
পাশে এসে কিছুক্ষণ শান্তি লাভের সিদ্ধান্ত
কতবারই না ভেসে গেছে বানের খড়কুটোর মতো। নিশ্চিত
জানি, তোমার ভেতর জীবনের স্পন্দন থাকলে, কখনঅ
নারাজ হতে না তুমি, বরং হাত নেড়ে বারণ করতে
তোমার অসীম আদম যত্নের বাচ্চু’র কষ্ট হবে ভেবে।
মা, ধিক আমাকে, বৃক্ষ রক্ষার মিছিলে দাঁড়ানো, সকল
সন্ত্রাসের বিপক্ষে উচ্চস্বরে আমার প্রতিবাদ জানানো,
সদ্য মসজিদ সংলগ্ন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা
একাত্তরের ঘাতক দালালদের নির্যাতিত
নারী-পুরুষের কঙ্কাল, করোটি, হাড়গোড়,
শিশুর হাতের মৃত্তিকা-দংশিত রুলি, কাপড়-চোপড়,
কত অশ্রুত, রক্তাক্ত হাহাকার, আর্তনাদ, তুরস্কের
ভূমিকম্পের হাজার মানব-মানবীর
জীবন্ত কবর, হিরোশিমায় মানুষের বিরুদ্ধে
মানুষের প্রধান, ভয়ঙ্কর সংহারতাণ্ডব,
আজও যা শিরায় শিরায় বইয়ে দেয় শৈত্যপ্রবাহ-
আম্মা, তোমার সুন্দর, নিরীহ কবরের কাছ থেকে তোমার
অপদার্থ সন্তানকে কেবলি দূরে সরিয়ে রাখছে। মা গো,
আমি আমার অপরাধের এই পাহাড় কোথায় লুকাবো?
২৪.০৮.৯৯