তোমাকে না দেখে কাটে দিন, দিন কাটে আর কত
রাত্তির ফুরায় নিদ্রাহীন। শবযাত্রীদের মতো
স্মৃতি ক্লান্ত পায়ে আসে, হাতে কিছু বিবর্ণ গোলাপ।
হঠাৎ কখনো যদি ডায়াল ঘোরাই টেলিফোন
একটানা বেজে চলে, ওপারের নীরবতা বড়ো
অত্যাচারী, দিন যায়, রাত কাটে তোমাকে না দেখে।
তোমাকে দেখি না তবু সর্বক্ষণ তোমাকেই দেখি।
দিব্যোন্মাদ মানুষের মতো দেখি তুমি পুষ্পময়
মেঘে মেঘে তুমি, তুমি ডহর পানিতে একাকিনী
সন্তরণশীল মাছ। কখনো পাখির চোখে আর
বন হরিণীর ত্বকে, কখনো-বা আমার আপন
করতলে দেখি; চোখ খুললে তুমি, বুজলেও তুমি।
এই তো দেখছি তুমি বসে আছো একা একা ঘরে,
শুনছো ক্যাসেটে গান বড় বেশি স্মৃতি-জাগানিয়া।
পড়ছো বিদেশ থেকে আসা চিঠি কিংবা আধুনিক
উপন্যাস দিচ্ছ ডুবসাঁতার, দেখছি বিছানায়
শুয়ে আছে বাইশটি বন্দনীয় উদ্ভিন্ন বছর,-
পাশে নিঃসঙ্গতা, কালো বিচ্ছিন্নতা বিলি কাটে চুলে।
সে শয্যার চারপাশে ঝর্ণাধারা বয়ে যায়, ঝরে
জুঁই চামেলীর বৃষ্টি খুশি মাখা শ্যামা ও দোয়েল
দ্যায় শিস ঘুরে ফিরে। আমার কবিতা অতিথির
মতো এসে দাঁড়ায় ব্যাকুল বড়ো তোমার চৌকাঠে-
দ্যাখো না তাকিয়ে, দৃষ্টি নত টানা গদ্যের বিন্যাসে,
তোমার চিবুকে স্তনে পড়ে তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস।
কবিতার খুব কাছে যেতে যেতে দ্যাখো আজ আমি
তোমার কাছেই পৌঁছে গেছি। কুয়াশার কারাগার
ভেদ করে তুমি চন্দ্রোদয়ের মতন ফুটে ওঠো
আমার এ অন্ধকারে। তোমাকে না দেখে কাটে দিন,
বস্তুত তোমাকে ভেবে ভেবে দীর্ঘ রাত রক্তজবা
ভোর হয়ে যায় বারে বারে। রাত্রি চেপে থাকে বুকে।
প্রায়শ ভয়ের নখ ভীষণ আঁচড় কাটে বুকে,
মাথার ওপর ঝোলে সর্বদা সিদূরে মেঘ; যদি
তোমার বাগান থেকে আমাকে ফিরিয়ে দাও, আমি
দাঁড়াবার জায়গা আর পাবো না কোথাও এতটুকু।
ছাওয়ার বিলাপময় দুর্যোগের ঘাটে আমি আজ
আমার সকল নৌকা দ্বিধাহীন এসেছি পুড়িয়ে।