আমার কাছের এবং দূরের
বন্ধুগণ,
মিনতি জানাই করজোড়ে,-
তোমরা আমাকে আর কখনো
আমার নিজের লেখা কবিতা
পড়তে বলো না।
গা ঘুলিয়ে ওঠে, ভয়ানক বমি
আসে, ওয়াক্ ওয়াক্ ক’রে
তলপেট চেপে ধরি অসহ্য
যন্ত্রণায়, কী যেন
দলা দলা বেরিয়ে আসতে চায়
কণ্ঠনালী ফুঁড়ে।
কীভাবে করব কবিতা পাঠ?
তোমরা আমাকে আর কখনো
আমার নিজের লেখা কবিতা
পড়তে বলো না।
চাঁদকে পনির ভেবে অগণিত
ধেড়ে ইঁদুর
কুট কুট খেয়ে ফেলছে
অবিরত,
আমাদের স্বপ্নগুলোকে দাঁতাল
শুয়োরের পাল
ঢেকে ফেলছে ওদের মলে,
আমাদের মুক্ত চিন্তার গলা
টিপে ধরছে কিছু ভৌতিক
হাত,
আমি ওদের তাড়াতে পারছি
না।
বাগানকে দ্রুত ভাগাড়
বানাচ্ছে যারা,
হায়, ওদের বারণ করতে
গিয়ে হিমসিম খাচ্ছি বেজায়।
কবিতার বইয়ের শব্দগুলো
উপেক্ষার
ত্র্যাসিডে ভীষণ ক্ষয়ে গেছে,
একটি পংক্তির ভগ্নাংশ থেকে
অন্য পংক্তির ভগ্নাংশ
কোন্ মুদ্রায় আলাদা, আমি
ঠাহর করতে অক্ষম!
যখন কবিতা পড়ার জন্য
কাব্যগ্রন্থ হাতে তুলে নিই,
তখন অনেক লোক প্রাণ
হারাচ্ছে
ধর্মান্ধ ঘাতকের অস্ত্রাঘাতে;
যখন কবিতার অপরূপ
ডৌলের কথা ভাবি,
তখন বহু ঘরবাড়ি পুড়ে যাচ্ছে
দুর্বৃত্ত, সাম্প্রদায়িক আগুনের
লালসায়।
যখন কবিতা পাঠের
সুশোভিত মঞ্চের কথা ভাবি,
তখন লকলকে পিশাচেরা বহু
নারীকে
মারাত্মক অগোছালো করছে
ধর্ষণে;
যখন কবিতার দ্যুতিময়
উপমার অপরিহার্যতা
এবং চিন্তার গভীরতা
বিবেচনায় রাখি,
তখন হাজার হাজার অভুক্ত
শিশু কাতরায়
ক্ষুধার নেকড়ে-দাঁতের
কামড়ে।
আমি আমার কবিতাবলীতে
স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষের অবিন্যস্ত
পদচারণা শুনতে পাই;
আমাকে তোমরা আমার
নিজের লেখা কবিতা
পড়তে বলো না কখনো,
পড়তে বলো না।
যাদের হিংস্র উত্থানে বিজয়
দিবসের উৎসবেও
বিষণ্ন, বড় বিপন্ন হয়ে যায়
স্বাধীন মানুষ,
যাদের হাতে এখনো আমার
শিক্ষকের,
আমার ভায়ের রক্তের ছোপ
আর্তনাদ করছে,
যাদের ফতোয়ার তুলট
কাগজে
বহু নারীর লাঞ্ছনা, বিপর্যয়,
হাহাকার, বুকফাটা চিৎকার
মুদ্রিত স্পষ্টাক্ষরে, যারা
অহর্নিশ
আমাকে বধ্যভূমিতে টেনে
নেয়ার ভাবনায় মশগুল
ধিক্ ধিক্ আমাকে, আজো
ওদের শাস্তি বিধান করতে
পারিনি।
আমার নিজের লেখা কবিতা
পাঠের
অধিকার আমি অনেক
আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
১১.১২.৯৩