দেখতে দেখতে খুব সকলবেলার সূর্যটাকে
পাকা স্ট্রাইকারের ধরনে
গড়িয়ে গড়িয়ে কেউ অতি দ্রুত পশ্চিম আকাশে
নিয়ে গেল। ঘরে
থই থই ছায়া, সারি সারি অক্ষরের অবয়ব
চোখে পড়লেও ঠিক কাউকেই আর
তেমন আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না, অথচ বেলা
গেল, পাখি তার
ক্লান্ত ডানাদ্বয় পাতাময় ডালে গুটিয়ে ফেলার
সঙ্গে সঙ্গে। খাতা বন্ধ করে তিনি চোখ বুজলেন।
জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলেন কিছু ক্রীড়াপরায়ণ
ছেলে মাঠ ছেড়ে
ঘরমুখো, পথপ্রান্তে যুবক-যুবতী হেঁটে যায় কবিতার
যুগল পঙ্ক্তির মতো। তাদের উদ্দেশে
আশীর্বাদ ঝরে তাঁর ঠোঁট থেকে, যদিও জানেন
তিনি এসবের আদপেই কোনো মানে
নেই শেষ অব্দি, কত দৃশ্য ফোটে পটে, মুছে যায় অগোচরে,
কার আর মনে থাকে ছায়ার আঁচড়?
উড়ে-যাওয়া বেলুনের পেছনে পেছনে
ধাওয়া করে বালকেরা। কিয়দ্দূরে র্যােফায়েল রমণীর মতো
কেউ ঘন দীঘল সোনালি
চুল আঁচড়ায়, জানালার ধারে কেউবা দাঁড়ায়,
ফেরি-অলা শাকসব্জি বয়, বারান্দায়
দু’জনের মধ্যে এলেবেলে কথা হয়-
এই সব ক্ষণিক বুদ্বুদ ভেবে তিনি একটি পুরনো চিঠি
ডায়েরির ভেতরে গচ্ছিত রাখলেন।
যুদ্ধের বাতিল কার্তুজের মতো চিন্তা নিয়ে তিনি
কী করবেন ভেবে দিশেহারা।
বেলা তো যাবেই; এই খুব একা-একা থাকা তাঁর
মাঝে-মাঝে ভারি হয়ে ওঠে
সিসের মতন; ঘরে বাতি জ্বালবেন নাকি অন্ধকার ঘরে
থাকবেন বসে চুপচাপ
কোনো পূর্বপুরুষের তৈলচিত্রের মতন, এই দ্বিধা
তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখল কিছুক্ষণ
ঘরের মেঝেতে, অকস্মাৎ তিনি বোধ করলেন
পাতি বুর্জোয়ার বিবমিষা।