শাতার্ত প্রান্তরে হু হু কাঁপছি নিয়ত। ঝরা পাতা,
মরা পাতাগুলো প্রেতস্বরে
বলে কিছু গূঢ় কথা; কিয়দ্দূরে পাখির কঙ্কাল
সদ্য বিধবার
নিভৃত শোকের মতো পড়ে আছে। শীতল হাওয়ার
স্পর্শে আজ সুখহ নেই, মনে হয় কয়েকটি তীক্ষ্ণ দাঁত
আমার ঈষৎ
বিবর্ণ শিথিল ত্বক ভেদ করে মাংসে
নিষ্করুণ বসে যাচ্ছে ক্রমাগত, মাথার কেশর
উধাও এখন, স্বাস্থ্য লুট হ’য়ে একাকী হেঁটে বেড়াতে পারি না
কিংবা নিশীথের
তৃতীয় প্রহরে সঙ্গলিপ্সু বান্ধবের সঙ্গে ঘুরে
ঘুরে পথে সকালের চোখে চোখ রাখতে অক্ষম
অথবা নৌকায় চড়ে ভাসি না পূণিমা-রাতে ধীর বুড়িগঙ্গার সলিলে।
হায়, মনমাতানো আড্ডার লোভে কতকাল আমি
যাইনি বিউটি বোর্ডিং এর শান্ত আশ্রয়ে এবং
কতদিন শুইনি মাঠের ঘাসে। এখন প্রায়শ
ঘরে থাকি, লেখাপড়া আছে যথারীতি,
রুগ্ন ফুস্ফুস্ নিয়ে কাশি হরদম,
দেখি দূর প্রবালদ্বীপের পাশে মৎস্যকন্যাদের জলকেলি
ভাবি তার কথা যে আমার নিভৃতির
উদাস প্রাঙ্গণে করে আসা-যাওয়া অলক্ষে সবার।
কে ক্রুদ্ধ ঈগল ক্রমান্বয়ে আমার শরীরটিকে ছিঁড়েখুঁড়ে
করেছে ভীষণ জব্দ, অথচ মনের
ঝুঁটি আজও অনমিত। নতুন শতাব্দী কড়া নাড়ে,
দাঁড়িয়ে ক্ষয়ের বৃত্তে ক্ষণে ক্ষণে যৌবনকে ডাকি ভগ্নস্বরে।