১
আবার আমার মন নীলিমামাতাল ঈগলের
মতোই চঞ্চল হয়ে ওঠে, পর্বতের এক চূড়া
থেকে দূরবর্তী অন্য চূড়ায় স্বপ্নের দীপ্র গুঁড়া
ব্যাকুল ছড়িয়ে দিতে চায়। এ স্থবির বিশ্রামের
জাল ছিঁড়ে নতুনের সন্ধানে মেতেছি বলে দোষ
ধরো যদি, তবে আমি নিরুপায়। এ পোষ-না-মানা
গতিরোধ আমাকে তাড়িয়ে ফেরে, তাই তো অজানা
সর্বদা আমাকে ডাকে, কারো মিনতি কি রোষ
কখনো পারে না দিতে বাধা যাত্রাপথে। কোনো নারী,
যতই সুন্দরী হোক, হোক মোহময়ী, নয় সে আমার
তৃপ্তির পরমা কেউ। অকূল তৃষ্ণায় বারংবার
ছুটে যাই এক রমনীর আলিঙ্গনে থেকে অন্য
তন্বীর মদির বুকে। ভালোবেসে যাকে পাই, ছাড়ি
স্বেচ্ছায় তাকেই, ফের নতুন তৃষ্ণায় হই বন্য।
২
আমার নরকবাস সকলের কাম্য। রূপসীর
স্বামী, তরুণীর পিতা, সবাই আমাকে অভিশাপ
দেয় দিনরাত, যেন আমি চিতাবাঘ কিংবা সাপ
খোপ, বরাহের, খাদ্য হই, হই দুধারী অসির
বলি ক্ষমাহীন শেষ দ্বৈরথে অথবা মায়াবীর
ইঙ্গিতে পাথুরে মূর্তি হয়ে যাই। কোনো মনস্তাপ
আমাকে করে না ম্লান, তাইতো আমার পদচ্ছাপ
অনেক উঠোনে পড়ে, প্রতি রাত্রি উচ্ছল মদির।
কেন থাকতেই হবে নরকের সান্ত্রীর অধীন?
পরমার অন্বেষণে কেউ যদি ছোটে দিগ্ধিদিক,
তৃষ্ণায় কাতর হয়ে এক হ্রদ ছেড়ে অন্য হ্রদে
রাখে মুখ, তবে তাকে পাপী ভেবে ধিক্ তোকে ধিক্
বলে দূরে সরে যাওয়া কখনো কি হবে সমীচীন?
ছুঁড়বে পাথর তুমি আমার নিঃসঙ্গ মুখচ্ছদে?
৩
ছিল না অনুশোচনা, ছিল না আমার ভয়ভীতি
কোনোদিন, ছুটে গেছি দেশদেশান্তরে, অভিযান
আমার শিরায় নিত্য পেয়েছে গতির স্তবগান।
বন্দরে বন্দরে ঘুরে নানান দেশের রীতিনীতি
জেনেছি এবং বহু অনুপম রমণীয় স্মৃতি
করেছি সঞ্চয় যাত্রাপথে। কোনোদিন পিছুটান
পারেনি পরাতে বেড়ি মনে, আমি করেছি আহ্বান
তাঁকে নৈশভোজে, যিনি বর্মাবৃত পাথুরের অতিথি।
যেহেতু কৌতুকী রৌদ্র এ-আমিকে করেছে লালন
অকৌশোর, বুঝি তাই তাঁকেই এনেছি কাছে ডেকে
পরিহাস ছলে, যাঁর হাতে নাচে আমার মরণ।
স্মৃতির বমনে ভাসি, কে রহস্যময় মাঝি হেঁকে
যার ঘন কুয়াশায়। একান্ত আমারই নির্বাচন
এ জীবন, যা গড়েছি লোকশ্রুত পাপপুণ্য ছেঁকে।