এখন তো পুশিদা সে জলশায় অত্যন্ত নিকটে
উচ্ছ্বসিত, রৌদ্রঝলসিত, জ্যোৎস্নাচমকিত; দেখি
আমার নিজের মুখ টলটলে জলে, ঝলমলে
ফলের গাছের ডাল ছায়া রাখে পানির তালুতে।
বিশাল চোখের মতো জলাশয় চেয়ে থাকে স্থির
একান্ত আমার দিকে, স্বপ্ন হয়ে ওঠে মাঝে-মাঝে।
শান্ত মেঘ আঁকে মৃদু চুম্বন সে হ্রদে কিংবা পাখি
করে ম্লান, কখনোবা জলপান; বিনম্র লাজুক
কোনো প্রাণী রাখে মুখ তার বুকে মুছে নিতে খর
পিপাসা অস্তিত্ব থেকে। দাঁড়িয়ে রয়েছি তীরে একা
সেই কবে থেকে, পদযুগ ভেজা খুব, ফুটিফাটা
পথ সারা বুক, ওষ্ঠে কেবলি শুকোয় রক্তধারা।
ভীষণ তৃষিত চোখে জলাশয়; শুধু জলাশয়
নাচে নক্ষত্রের মতো। কী কাতর অস্তিত্ব আমার!
আমার অনেক দীর্ঘশ্বাস, অনিদ্রার রক্তজবা
করেছি অর্পণ এই জল দর্পণে। বহুক্ষণ
ঝুঁকে থাকি নিষ্পলক কখনো দাঁড়াই, ফিরে আসি
পুনরায়, তীরবর্তী ফল ছুঁতে গিয়ে দেখি ওরা
লাফিয়ে শতেক দূর স’রে যায়। আমার যন্ত্রণা
দেখে দেখে পানি আসে গাছের পাতার চোখে আর
কুঞ্চিত ফলের চোখ, পাথরের নিচে শত কীট
ভীষণ শিউরে ওঠে। ওষ্ঠ রাখি জলাশয়ে, তবু
পারি না করতে পান এক বিন্দু জলও। বারবার
এরকম প্রতিহত হবো আমি-এই তো নিয়তি।
উদ্ভিদ আমার চোখে, কাঁধে, গ্রীবায় একাকী বাড়ে,
পানি কাঠগুঁড়ো হয়ে ঝরে ঠোঁটে, মুখের ভেতরে।
ভয় পাই, অবশেষে গাছের শিকড় হয়ে যাব?
আমি তো ফিরি না ঘরে আর, পুড়ে যাই। জলাশয়,
হে পুশিদা জলাশয়, তুমি পারো নাকি ধুয়ে নিতে
আমার এ অভিশাপ নিমেষেই একটি চুম্বনে?