এ কী হলো! ভাবিনি কখনও আগে এরকম হুট
করে, হায়, গোধূলি আসবে নেমে জীবনে আমার
কাঁপিয়ে সত্তার মূল কাঠামো, ছিলাম
মগ্ন কাজে, সাদা
কাগজে আঁচড়ে কেটে কেটে, কত রাত হয়ে গেছে
শিশুর হাসির মতো ফুটফুটে ভোর। কখনও বা
তুইতোকারিতে, হাসি-হুল্লোড়ে করেছি নরক
গুলজার ইয়ারবক্সির সঙ্গে। প্রণয় পেখম
মেলে কত বিমুগ্ধ প্রহরে
করেছে আমাকে ঋণী, কেটেছি সাঁতার ঝলমলে সরোবরে।
আজ এই গাঢ় গোধূলিতে ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গতা
শিরায় শৈত্যপ্রবাহ আনে, এমনকি
ভিড়ে আরও বেশি একা লাগে, মনে হয় ডুবে যাবো
অতল আন্ধারে। কত ছায়া-সহচর আসে যায়,
কেউ চুপচাপ বসে থাকে, কেউ বা ভ্যাংচায় মুখ, কেউ কেউ
অঙ্গুলি নির্দেশ করে মাটির স্তূপের দিকে, নিভৃত কবর
যার ডাক নাম। যেন খুব কাছের কাউকে ডেকে
ইচ্ছে হয় বলি এই গোধূলিতে মগজ ভীষণ
যাচ্ছে ছিঁড়ে নখরের সুতীক্ষ্ণ আঘাতে। কে আমাকে
বাঁচারে এমন সন্ত্রাসের নগ্ন নিপীড়ন থেকে?
কেউ কেউ ভীষণ ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বরে ধমকায়-
‘বুড়ো তোকে মৃত্যু এই মুহূর্তে ঝেঁটিয়ে নিয়ে যাক। আজ আমি
এমনই বেহুদা আর ঘূণিত উদ্বৃত্ত কেউ, খুব
অপ্রয়োজনীয় আর নিশ্চিত বাতিল। আকাশের
দিকে চোখ চলে যায় অভ্যাসবশত, চোখ ভিজে
ওঠে প্রায়, তবু শুক্নো রয়ে যায়, বড় জ্বালা করে।
তবে কি আমার উপস্থিতি এই গোধূলিতে এতই অসহ্য,
আমাকে এখনই চলে যেতে হবে সব ছেড়েছুড়ে? এখনই কি
ওরা সব আমার দু’চোখে
সূর্যাস্ত আনতে চায়? আমি যা দিয়েছি এতকাল
নিজেকে পীড়ন করে, নিংড়ে, তার নেই কি কোনওই মূল্য, হায়?
সবই কানাকড়ি আর এক মুঠো ধুলো?
কারও বাড়া ভাতে ছাই দিইনি কস্মিনকালে, কারও
বাগান করিনি লণ্ডভণ্ড বুনো মোষ ছেড়ে দিয়ে। আমি শুধু
চেয়েছি থাকতে নিরিবিলি আপনজনের মাঝে,
চেয়েছি ঝরুক জীবনের সুধা আমার উৎসুক ঠোঁটে,
বর্ষায় উঠুক বেজে মাঝে মাঝে বৃষ্টির নূপুর,
শিশুর মধুর কণ্ঠস্বরে গান হোক সারা ঘর,
গ্রীষ্মে কিংবা শীতে হৃদয়ের ভিটে মুখরিত হোক
উৎসবে, জীবন হোক হাসি-ঝলসিত শান্ত শারদ আকাশ।
১৬.৮.২০০০