জানালার কাছে দাঁড়াইতেই আমার
ভেতরে একটি সুরের জন্ম হলো, যার আদি উচ্চারণ-
আহ্, কি অপরূপ সকাল। গলিপথ
সৌভাগ্যের বাহুর মতো প্রসারিত, হাস্যেজ্জ্বল।
নরম রোদ জড়িয়ে ধরেছে পথ,
গাছপালা, লম্বা দেয়াল আর বাড়িগুলোকে।
হালকা হাওয়ায় নেচে উঠছে গাছের পাতা,
নারকেল গাছের ডালগুলো মাথা নুইয়ে রেখেছে,
যেন কোনো মাননীয় অতিথি আসবেন। এই মুহূর্তে
রাস্তায় কোনো যান নেই, জন নেই,
একেবারে ফাঁকা। হঠাৎ দেখি, তুমি হেঁটে আসছো একা;
তোমার ফিরোজা শাড়ি মুর্হূর্তগুলোকে
চঞ্চল করে তুলেছে, তোমার গৌর, স্বপ্নিল মুখে
চুমো খাওয়ার জন্যে রোদ আর হাওয়ার সে কি হুটোপুটি।
জানলার কাছে দাঁড়িয়ে কেন জানি কৃতজ্ঞতায়
ভরে উঠল মন। এ কি, আমার কাঁধ ফুঁড়ে জেগে উঠেছে
দুটি স্বর্ণচাঁপা আর তিনটি রক্তজবা। ওরা এখন
উন্মুখ তোমার নৈবেদ্য হাওয়ার অভিলাষে।
তুমি কি এই মুক্তোপ্রতিম ভোরবেলায়
হেঁটে এলে আমার দুঃখগুলোকে মুছে ফেলার জন্যে?
তুমি কি এলে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার উদ্দেশ্যে,
যে-প্রতিশ্রুতি তোমার গহন মমতাময় দু’টি চোখ
মুদ্রিত করেছিল আমার মর্মমূলে? তুমি কি নিজেকে আমার কাছে
পরিপূর্ণ উন্মোচিত করবে ছায়ার আড়ালে স্নানরতা গ্রিক দেবীর মতো?
সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি এই ছোট ঘরে,
আমার অন্তরে বাউলের গোপীযন্ত্র
বাজিয়ে চলেছে মনের মানুষের আগমনী সুর এবং
আমি আবৃত্তি করছি তোমার নাম। অথচ
তোমার অনুপস্থিতির স্তব্ধতা
আমাকে উপহাস করছে খল নায়কের ধরনে।
২৪.৯.৯৪