কোথাও যাই না আজকাল, থাকি গৃহকোণে একা;
খুব কি খারাপ আছি স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে?
ব্যালে নর্তকীর মতো রোদ্দুর, চাঁদিনী, বারান্দার
টবের গোলাপ, বই সঙ্গে দেয় নিঃশর্ত আমাকে। মাঝে মাঝে
ছয় বছরের পৌত্রী আমাকে খেলায় টেনে নেয়
হাসিখুশি; সবচেয়ে বেশি
আমার নিঃসঙ্গ সময়কে ভরে তোলে
একজন মানবীর টেলিফোনবাহী প্রিয় কথার কুসুম।
আহত হরিণ আমি, যার শিং জটিল লতায়
ভীষণ জড়িয়ে গেছে; যত মুক্ত হতে চাই, ততই আটকে
যেতে থাকি। অমাবস্যা-রাতে
গুহাবাসী অপদেবতারা নিশ্চুপ বেরিয়ে এসে
ক্রূর দাবা খেলায় আমাকে হিঁচড়ে নিয়ে
মুক্তিপণ দাবি করে। অন্তরের আলো প্রভাবে
সতেজ হাওয়ায় কিছুদিন
স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিই। ওরা দূরে থাকে,
অথচ পাকায় ঘোঁট সারাক্ষণ, অতর্কিতে ফের
কোনও ঘোর চাঁদিখেকো রাতে
শিকারি কুকুর হয়ে ঘিরে ধরে নিমেষে আমাকে
আমারই নির্জন ঘরে। ছিন্ন কণ্ঠনালী, রক্ত ঝরে; এইমতো
দুঃস্বপ্নের ঊর্ণাজাল ছিঁড়ে মাঝে মাঝে
বোবা আর্তনাদ করে ঘামে নেমে উঠি।
কখনও-কখনও মধ্যরাতে এক দেবদূত এসে
ঘুম থেকে ডেকে তোলে চুপিসারে আর পাশা খেলায় জানায়
আমন্ত্রণ; বাজি ধরে, যদি জিতে যাই,
তবে কবিতার কিছু অবিনাশী পঙ্ক্তি পেয়ে যাব,
হেরে গেলে মরণ নিকটবর্তী হবে অতি দ্রুত। হা কপাল,
কালেভদ্রে জয়ী হই, প্রায়শই পরাজয় মেনে নিতে হয়।