ছেলেটা কখন ফেরে কত রাতে কেউ তা জানে না।
রুক্ষ চুল, মাটিমাখা জুতো পায়ে চেনা
গলিটা পেরিয়ে আসে, ঢোকে ঘরে একা, নড়বড়ে
চৌকি দেয় কোল আর পাশের টেবিলে থাকে প’ড়ে
কড়কড়ে ভাত, ভাজা মাছ (মা জানেন ছেলে তার
খুব শখ করে খায়) এবং পালং শাক, ডাল, পুদিনার
চাটনি কিঞ্চিৎ। অথচ সে পোরে না কিছুই মুখে, হ্যারিকেন
শিয়রের কাছে টেনে বই পড়ে, আর ভাবে কী-কী অহিফেন
জনসাধারণ আজ করছে সেবন বিভ্রান্তির চৌমাথায়।
দ্যাখে সে কালের গতি মার্কস আর লেনিনের প্রসিদ্ধ পাতায়।
সকাল হলেই ফের ব্যাকুল বেরিয়ে পড়ে, মা থাকেন চেয়ে-
দেখেন ছেলের মাথা ঠেকে ঘরের চৌকাঠে, তাঁর চোখ ছেয়ে
চকিতে স্বপ্নের হাঁস আসে নেমে, পাখসাটে কত
ছবি ঝরে সেকালের, ঝরে জ্যোৎস্না স্ফুলিঙ্গের মতো।
ভাবেন এমনি একরোখা, কিছুটা বাতিকগ্রস্ত ছিলেন তিনিও, মানে
যার পরিচয় এই দেহ-দ্বীপ, দুঃখের উপসাগর জানে।
‘ছেলেটা পাগল নাকি? প্রতিবেশী বুড়ো বললেন খনখনে
কণ্ঠে তাঁর। ‘পাগল নিশ্চয়, নইলে ঘরের নির্জনে
কেন দেয়নি সে ধরা’, ভাবেন লাঠিতে ভর দিয়ে বুড়ো, ‘নইলে কেউ বুঝি
মিটিং-মিছিলে যায় যখন-তখন? সব পুঁজি
খেয়ায়, ঘরের খেয়ে তাড়ায় বনের মোষ? জীবনের সকালবেলায়
গোলাপের মতো প্রাণ জনপথে হারায় হেলায়?’