হঠাৎ জেগে উঠে দেখি মধ্যরাত। আন্ধার ঘরে
এক গা ঘেমে কেমন হাঁসফাঁস করি,
মনে হ’লো একটা অক্সিজেন মাস্ক হলে বাঁচি। বিছানায়
অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও নির্ঘুম।
কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম
কে যেন কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে; সেই
ক্রন্দনধ্বনিকে অনুসরণ করে পৌঁছে যাই
পড়ার ঘরে। জানলার শিক নয়, বুক শেলফ নয়,
পর্দা নয়, আমার পুরনো লেখার টেবিলের
বুক চিরে বেরুচ্ছে কান্না। এর আগে
কোনোদিন এরকম কিছু ঘটেনি। কে এই
তরুণী যে নিশুত রাতে ঝরিয়ে দিচ্ছে মনোবেদনা?
কাঠের টেবিল বেদনার্ত স্বরে বলল
একটি বনের কথা, তার বৃক্ষ স্বজনদের বৃত্তান্ত,
সে বললে এক যুবক-গাছ আর
তার প্রণয় কাহিনী। হাওয়ার দোলায় ওরা
পরস্পর মুখচুম্বন করত সক্কালবেলা, জ্যোৎস্নারাতে,
এত কাছাকাছি ছিল দু’জন।
একদিন বিহানবেলা কিছু লোক ওদের কেটে
সাফ করল বনের একাংশ আর সে কী কান্নার
রোল পড়েছিল সেদিন। বিরহিনী গাছ-তরুণী
আখেরে ছুতোরের কারিগরির সুবাদে
পেলো টেবিলের ডৌল, যার ওপর
এখনো চাপানো রয়েছে কিছু বই, রাইটিং প্যাড, টেবিলল্যাম্প
টেলিফোন সেট আর গাঢ়-নীল ডায়েরি,
যাতে আমি অনেক খুঁজে খুঁজে
জড়ো করেছি বিস্তর নক্ষত্রকণা এবং
প্রবালের টুকরো। আমি চেয়ারে বসে
ব্যথিত হৃদয়ে শুনলাম গাছ-তরুণীর
প্রিয়-বিচ্ছেদের কাহিনী।
লেখার টেবিলের কান্না থামতেই, সেখান থেকে
হাঁস আর বীণা হাতে উঠে এলেন
এক অনিন্দ্য প্রতিমাপ্রতিম নারী
সফেদ হাঁসের ডানার একটি পালক খসিয়ে আমার হাতে
তুলে দিয়ে বললেন, ‘তোমাকে এ আমার উপহার
এখন থেকে এটাই হোক তোমার লেখনী।
হাঁসের পালক ভাসতে থাকে হাওয়ায় আর
আমি তার পেছনে পেছনে ছুটতে থাকি ছুটতে থাকি।