প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা
শহরবাসীরা চিড়িয়াখানার এরকম
উন্নয়নে যারপরনাই আনন্দিত। নগরপ্রান্তে
আপনারা স্থাপন করেছেন আরণ্যক সৌন্দর্য। নিসর্গের
সাবলীল তানে মুগ্ধ হয়ে সেখানে
কাটানো যায় প্রহরের পর প্রহর। নানা ধরনের
গাছপালা উৎপীড়িত স্নায়ুর শুশ্রূষা করে
আর নতুন ব্লেডের মতো চকচকে ঝিল শরতের রোদে
ঝিলমিল, সেখানে ডেরা বেঁধেছে বহুদূর থেকে আসা
জলচর পাখির ঝাঁক।
সত্যি বলতে, আপনাদের প্রশংসনীয় ব্যবস্থাপনায়
বেশ ভালোই আছে বাঘ, ভালুক, সিংহ
হাতি, গণ্ডার, জলহস্তী আর
রঁদার ভাবুকের মতো শিম্পাঞ্জী আর অনেক কিসিমের
বানর, ওরাং ওটাং মাঝে মাঝে
দোল খায়। খাঁচায় ফিরে আসে আরণ্যক স্মৃতি।
জিরাফ, জেব্রা আর এমু নিজেদের
স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে দিন কাটায় নিজ নিজ এলাকায়,
বিভিন্ন হরিণ সৌন্দর্যের ঢেউ বইয়ে দেয়
ঘাস-অলা জমিতে। হরিণের কাছাকাছি চরে
সম্বর, নীল গাই। ময়ূর, সারস, টিয়ে, ক্যানারি
আর অন্যান্য পাখি দেখে কৌতূহলী দর্শকদের
চোখ জুড়ায়। খুব দক্ষতার সঙ্গে, বলা যায়,
এদের দেখভাল করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানার
প্রতিটি বাসিন্দার জন্যেই
বারাদ্দ হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দাবার,
ঘড়ি দেখে ওদের খাওয়ানো হয় প্রতিদিন। তাছাড়া
ওরা অসুস্থ হ’লে আছে নামী-দামী চিকিৎসকের বিধান।
চিড়িয়াখানার এই সুপরিকল্পিত সৌন্দর্য,
যা আমাদের মোহগ্রস্ত করে,
যা আমাদের ভেতরে আদিমতার আড়মোড়া ভাঙার
অবকাশ তৈরি করে, জীবজগতের সঙ্গে
আমাদের সম্পর্কের ঝালর সৃষ্টিতে এক কুহকপ্রবণ
সিনারিও নির্মাণে উদ্দীপনা-জাগানিয়া,
আপনাদেরই সুকৃতির নিদর্শন। এ-জন্যে সকল প্রশংসা
আপনাদের অবশ্যপ্রাপ্য।
যদি কিছু মনে না করেন, তাহ’লে
আপনাদের বিবেচনার জন্য সামান্য একটি প্রস্তাব
পেশ করতে পারি। নিসর্গের শপথ, উদার
আরণ্যক সৌন্দর্যের শপথ, আপনাদের কমিটিতে
এই প্রস্তাব গৃহীত হ’লে
চিড়িয়াখানা সবদিক থেকে নিখুঁত হয়ে উঠবে।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, এ শহরে
এমন কিছু প্রাণী আছে, যারা দেখতে অবিকল
মানুষের মতো। ওরা বড়ই হা-ভাতে, দোরে দোরে
ধর্না দেয় একটু ভাতের জন্যে, পাড়ায় পাড়ায়
ছড়ায় বিরক্তি, যা নোংরা,
দেখলেই বিবমিষা হয়। মাদার তেরেসার সম্মান দয়া করে ওদের একটু
ঠাঁই দিন আপনাদের চিড়িয়াখানায়। বানিয়ে দিন
বড়োসড়ো একটা খাঁচা, সংখ্যায় ওরা নেহাত
কম নয়। নিয়মিত কিছু খাদ্য বরাদ্দ করুন ওদের জন্যে।
তাছাড়া উপরি হিসেবে ওরা পেয়ে যাবে
দর্শকদের কাছ থেকে ছোলা আর কলা। দেখবেন
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ওরা আপনাদের
সুন্দর, সুশোভিত চিড়িয়াখানার
জীবজন্তুরদের মতোই হয়ে উঠবে নান্দনিকভাবে দর্শনীয়।