(সহোদরা মেহেরুন্নেসার প্রয়াণে)
চলে যাচ্ছি, চলে তো যেতেই হয় শেষ অব্দি, তবে হা-পিত্যেশ
করে নয়; সম্ভ্রম বাঁচিয়ে, বাধা-বিপত্তির হাত
ভীষণ মুচড়ে দিয়ে মাথা উঁচু রেখে
যেন চলে যেতে পারি, এ রকমই খায়েশ আমার।
আমার চলার পথে, এতদিনে জেনে গেছি, কাঁটা বিছানোর
লোকের অভাব নেই, কেউ কেউ এ রকমও আছে
এখুনি আমাকে জিন্দা কবরে শোয়াতে
পারলেই কী তোফা আহ্লাদে আটখানা
হয়ে নেচে নেচে ঢের বাতাসা বিলাবে
মসজিদে, ইয়ারবক্শির মজলিশে।
চলে যাচ্ছি, চলে তো যেতেই হয় ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায়
বাস্তবিক; তবে প্রশ্ন হলো এই, এই যে আমার
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির হরেক রকম
উপচার, ঋতুর বাহার, জ্ঞান আহরণে উপযোগী
গ্রন্থমালা, দিগ্ধিদিক থেকে বিচ্ছুরিত
আলোরশ্মি, যা সত্তাকে ঋদ্ধ করে প্রহরে প্রহরে, সবই চাই।
সহোদরা, যে আমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট,
বস্তুত ক’মাস থেকে শয্যাগত অসুখের হিংসুটে ঝাপ্টায়,
তিনদিন চেতনার সুদৃপ্ত এলাকা থেকে নির্বাসিতা শেষে
প্রত্যুষে পড়লো ঢলে; ‘গেলো’ গেলো’ ব’লে
রাতজাগা পাখি প্রভাতকে নিমেষেই
কৃষ্ণপক্ষময় প্রহরের অংশ করে ফেলে ফের!
মেহের, আমার বোন, দেখি মেঘে ভেলা
ভাসিয়ে চলেছে একা, বড় একা, কোন্ সে অজ্ঞাত লোকে নাকি
মহাশূন্যতায়? নিজেও কি
শূন্য হয়ে দুনিয়ার এক হাহাকারপুজ্ঞের নিখাদ
অংশের শামিল হবে? এমন কেউ তো নেই যে আমাকে বলে দেবে আজ?
কোনও জ্ঞানী, কোনও গ্রন্থ আমাকে জানাতে আসবে না।
তা’হলে কি আজ এই সন্ধ্যেবেলা নিজের গলায়
চালাবো অব্যর্থ ছুরি? কস্মিনকালেও নয়। যতদিন পারি
জীবনকে আলিঙ্গন ক’রে রয়ে যাবো
পূর্ণ আশা-জাগানিয়া আলোক ধারায়।।
২০-১১-২০০২