ঘুমোবার আগে

আজকাল রাতে ঘুমোবার আগে বাতি
নিভাতে গেলেই অকস্মাৎ
থমকে দাঁড়াই বলে সহজে স্যুইচ
টেপাই হয় না ঘরে বাতি জ্বলতেই থাকে আর
নিজে আমি বিছানায় শুয়ে পড়লেও চোখ, মন
থাকে নিদ্রাহারা, হিজিবিজি ছবি কিছু দেয় হানা।

দেয়ালের বুক ফুঁড়ে কঙ্কালের বীভৎস ভগ্নাংশ ক্রমাগত
ঝরে আর নেচে নেচে গায়ে কাঁটা-দেয়া
কাহিনী শোনাতে থাকে। মেঝে ফুঁড়ে ভেসে
আসে অতিদূর শতাব্দীর রমণীর
আর্ত কণ্ঠস্বর জল্লাদের ঝলসানো খড়ুগে বিদ্ধ
ছিন্ন মুণ্ডু কাঁদতে কাঁদতে আচানক হেসে ওঠে।

একজন রাতকানা গবেষক পাণ্ডিত্যের আভা
লাভের আশায় এক কোণে
প্রাচীন টেবিলে ঝুঁকে চষে চলেছেন হলুদ পুঁথির পাতা,
জীর্ণ পাতাদের ঝরে পড়বার দুর্ঘটনা রোধের চেষ্টায়
গবেষক সর্বক্ষণ হুঁশিয়ার! কণ্ঠে তার মালা
পরাবার বাসনা প্রবল হয় আমার এ নৈশ প্রহরে।

মন্ত্রমুগ্ধ আমি তার দিকে এগোতেই দৃষ্টিপট
থেকে সেই দৃশ্য লুপ্ত, চৌদিক ব্যাকুল
হাতড়াতে থাকি জন্মান্ধের মতো আর
আমাকে একটি ডাকাবুকো পাখি এসে নিরর্থক
ঠোকরাতে থাকে, রক্ত ঝরে, চিৎকার করতে চাই,
নিষ্ঠুর কে যেন কণ্ঠ শব্দহীন করেছে আমার।
কী ক’রে যে আচানক আমার ভেতর জন্ম নেয় অপরূপ
ডালপাতাময় গাছ, সবুজ পাতারা
নৃত্যপর হয়, ডালে তিনরঙা তিন পাখি গান
গেয়ে ডেকে আনে প্রজাপতিদের, বুঝি না কিছুই। ক্লান্তি চোখে,
মনে আলগোছে
বিছায় নিদ্রালু পাটি। মেঘের পেলবতায় ঢলে মিশে যাই।
২০-৫-২০০৩