ঘরে-বাইরে

আয়নায় নিজের শুকনো মুখ দেখে কেমন অচেনা মনে হয়;
বেশ কিছুদিন থেকে কোথাও যাই না, শুয়ে-বসে
আর পায়চারি করে নিজের ঘরেই আছি। হঠাৎ কী হয়,
একদিন ফুটপাত কাউকে কিছু না বলে ঠিক
ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। কিছুদিন ঘর ছেড়ে
বাইরে বাইরে ঘুরে কাটিয়ে দিয়েছি বহু মানুষের
জটলায়, কোলাহলে। তারপর দেখি একদিন কী খেয়ালে
আমার আপন ঘর এসে খোলা রাস্তায় দাঁড়ায়।
কবিতার মুহূর্ত এখনই-ঘরে বসে ভেবে নিয়ে
তাড়াতাড়ি একটি কলম হাতে তুলে নিই। মগজের নানা
স্তরে ফোঁটা ফোঁটা মধু ঝরে,দোয়েলের গান জাগে
দোলে নীল পদ্ম, পূর্ণিমার বান ডাকে, রাঙা প্রজাপতি ওড়ে
আনন্দের ঢেউ হয়ে। অথচ খাতার পাতা শূন্য থাকে, লাফিয়ে ওঠে না
রঙিন মাছের মতো কোনও পঙ্‌ক্তি। এমনও তো হয়, পথে একা
হেঁটে যাই, মগজের কোনও স্তরে মেঘ নেই, বিদ্যুল্লতা,
অথচ চঞ্চল হয় অলস আঙুল, নিমেষেই
মনোলোকে খাতার বিরান মরুভূমি ইন্দ্রজালে
যেন চোখ জুড়ানো নবীন মরুদ্যান হয়ে যায়।
কিছুদিন আমার নিজের ঘরে চাতক, ধনেশ হরিয়াল,
পাপিয়া, কোকিল, শ্যামা আসর জমায়,
তারপর একদিন উড়ে উড়ে চলে যায় দূরে। পাখিদের স্বরলিপি
শুনতে পাই না বলে মনে
বেদনা আঁচড় কাটে ক্ষণে ক্ষণে। কী-যে হয়, হঠাৎ কখন
ঘর ছেড়ে ঘুরি বনবাদাড়ে পাখির সঙ্গ পেতে। পক্ষীকুল
আমাকে চিনতে পেরে কণ্ঠে অর্কেস্ট্রার
সুর তুলে স্বাগত জানায়।