গ্রন্থাবলি প’ড়ে আছে, লেখার টেবিলে চশমা, কালো টুপিটায়
জমছে মসৃণ ধুলো এবং জায়নামাজ, পুণ্য স্মৃতিময়,
নিবিড় গোটানো একপাশে। প্রাতরাশ ঠাণ্ডা হচ্ছে বলে কেউ
ডাকবে না ঘন ঘন। প্রত্যহ বাড়বে বেলা, মধ্যরাতে একে একে বাতি
নিভবে প্রতিটি ঘরে। কদিমী চেয়ার ছেড়ে গ্রন্থাগার থেকে
বেরিয়ে আপনি আর সিঁড়ি বেয়ে যাবেন না একা
দোতলায়, মগজের নন্দিত নিকুঞ্জ
আধ্যাত্মিক পাখির অমর্ত্য গানে গুঞ্জরিত হবে না কখনো।
দুশ্চরিত্র সময়ের কাছে আপনাকে নতজানু হতে কেউ
দ্যাখেনি কখনো, আপনার আচকানে, পেয়েছে সক্ষম পাখা
নিঙ্কলুষ নীলিমায়। হে বিদ্যা, হে প্রজ্ঞা, মনীষার মন্বন্তরে
ছিলেন বিপুল অন্নসত্র, যে যেমন খুশি নিয়েছে অঞ্জলি
পেতে বারবার।
এখন আছেন গ্রন্থে, বাংলার স্মৃতিতে, জ্বলজ্বলে দরোজায়।
সেই কবেকার অপরূপ শৈশবকে কোন জাদুবলে চির-
প্রতিবেশী করে রেখেছিলেন মায়াবী কুঠুরিতে,
ভেবেছি বিস্ময়ে কতদিন। অন্বেষণে
আলোকিত শতঝুরি একটি বৃক্ষের কাছে চেয়েছেন পৌঁছুতে সর্বদা।
সোনালি মাছের মতো উঠত লাফিয়ে
আপনার প্রবীণ চোখের নিচে নিত্য অভিধানের শব্দেরা
বারবার, সস্নেহে দিতেন ঠাঁই একান্ত মানস-
সরোবরে। পাণিনীয় সূত্রের মায়ায় হেঁটেছেন গহন জটিল পথে
দীর্ঘকাল প্রশ্নাতুর। বাংলা ব্যাকরণ রাজনর্তকীর মতো
মদির কটাক্ষ মেলে আপনাকে ডেকে নিয়ে গেছে
অন্তঃপুরে, সহবাসে বিনোদের ধ্বনি অতঃপর
সামাজিকতায় বেজে ওঠে ঘরে ঘরে।
অন্ধকারে যাব না কখনো, অন্ধকার
আমাকে ভীষণ ক্রুদ্ধ করে, করতেন উচ্চারণ মনে মনে
হয়তোবা; আপনাকে আলোর প্রেমিক
জেনেছি সর্বদা। অন্ধকারে যাবেন না, যাবেন না কোনো দিন
আমরাও বলেছি ব্যাকুল
অথচ পেছনে সীমাহীন অন্ধকার ফেলে, শুধু
কতিপয় গ্রন্থ হয়ে উদাস গেলেন চলে অন্য অন্ধকারে।