জীবন ফুরিয়ে যায়,
জীবন ফুরিয়ে যায় সাত তাড়াতাড়ি।
এই তো সেদিন মা আমার পাঠাতেন
আমাকে পোগোজ স্কুলে সযত্নে মাথায় সিঁথি কেটে,
দিতেন ঝুলিয়ে ব্যাগ কাঁধে,
রোজানা বরান্দ ছিল দু’পয়সা টিফিনের আর
এখন আমার ছেলে
দশটা পাঁচটা করে আপিশে, দুপুরে
রেস্তোঁরায় খায়,
প্রত্যহ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে ক্লান্ত পায়।
জীবন ফুরিয়ে যায়,
জীবন ফুরিয়ে যায় সাত তাড়াতাড়ি।
এই তো সেদিন আমি দিয়েছি তোমার কানে ঢেলে
কত ব্যাকুলতা, তন্বী ত্বক
নিমেষেই হতো রক্তজবা। আজ কেমন ধূসর
মলিন হয়েছো তুমি, তোমার প্রাক্তন অস্তিত্বের
শাড়ি-পরা প্রেত তুমি, হায়!
জীবন ফুরিয়ে যায়,
জীবন ফুরিয়ে যায় সাত তাড়াতাড়ি।
এইতো সেদিন আমি হাফ প্যান্ট প’রে
জনকের হাত ধ’রে ঘুরেছি বিকেলে
শৈশবের মাঠে।
জনক গতায়ু সেই কবে,
আমার দৌহিত্র আজ, তিন বছরের
শিশু,
কত যে বায়না ধরে, গেরিলার মতো
স্টেন গান নিয়ে করে আনাগোনা
বালিশের জঙ্গলে এবং
আধো আধো বোলে পপ গান গায়।
কখনও সে দাঁড় বায় সাধের ময়ূরপঙ্খী নায়, দেয়
পাড়ি সাত সমুদ্দুর,
তের নদী, যখন তখন
রাঙা পাল সোৎসাহে খাটায়।
জীবন ফুরিয়ে যায়,
জীবন ফুরিয়ে যায় সাত তাড়াতাড়ি।
দেবেদ্রবাবুর
ভীষণ অঙ্কের ক্লাশে, মনে পড়ে, বড় কাবু আমি,
দিয়েছি প্রচুর ফাঁকি; বুঝি
তাই জীবনের গলিঘুঁজি নিত্যদিন দিচ্ছে ফাঁকি
এখন আমাকে আর হিসেবের গরমিল দেখি
কিংবা ভয়ঙ্কর ভুল
জীবন খাতার প্রায় প্রতিটি পাতায়।
জীবন ফুরিয়ে যায়,
জীবন ফুরিয়ে যায় সাত তাড়াতাড়ি।