কিছুকাল থেকে
কোহিনূর রেস্তোরাঁয় ক’জন যুবক জড়ো হয়
নিয়মিত, ষড়ঋতু জড়ায় সত্তায়,
তাদের ক’জন চেনা এবং অচেনা কেউ কেউ
আমার নিকট, কেউ লোকগাথার মলিন কাঁথা থেকে মুখ
বের ক’রে শহরের
কাসিদা রচনা করে, কেউ কেউ টেবিলকে
হঠাৎ ষোড়শ শতকের গ্লোব থিয়েটার ভেবে
নিয়ে হ্যামলেট ভেবে নিজেকে কবোষ্ণ রক্তধারা
হাতে মাখে, ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ, ভীষণ তুষারাবৃত বৃক্ষের মতন
নীয়ারের চুলে হাওয়া লাগে, পর্দা নেমে আসে।
একজন যুবা, যে বৃষ্টির অগণিত নখ
ভালোবেসে, ভিজতে ভিজতে অকস্মাৎ
ঝোড়ো বেগে ঢুকে পড়ে, হাসি মুখে চায়ের অর্ডার দেয়,
সঙ্গে চাই একটি কি দু’টি উদ্ভিন্ন সিঙাড়া।
এক পীস ফ্রুট কেক হ’লে
আরো ভালো হয়, যার হাত টেবিলে খাটুনিজব্দ মজুরের
মতো স্রেফ ক্লান্তির ডানার
নিচে শুয়ে আছে, তার দিকে স্বপ্ন হেঁটে
আসে ক্রাচে ভর দিয়ে। যে ক’মাস ধরে কবিতার
একটি পংক্তিও
সাজাতে পারেনি তার ডায়েরির পাতায়, হুতুশে
চেহারা নিয়ে সে ব’সে আছে, যেন তাকে
ছেড়ে গেছে বাঁচবার। সাধ। একজন মনে-মনে
কল্পনার খাল দ্রুত ছাড়িয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছে শত।
রঙিন ঘুড়ির মতো শব্দ স্বপ্নিল সুতোয় আর
কেউবা অনূঢ়া বড় আপার ভীষণ
হুহু যৌবনের ব্যর্থতায়
গোপন কান্নায় ভেঙে পড়ে, অথচ বাইরে তাকে
কেমন লড়াকু মনে হয়। অন্যজন,
পার্টির একাগ্র কর্মী, গোয়েন্দার সতর্ক নজর
এড়িয়ে বেড়ায় সর্বক্ষণ, মাঝে-মাঝে দেখা দেয়
বন্ধুদের একান্ত ডেরায়।
অনেক পুরানো ডাকটিকেটের মতো
কিছু স্মৃতি-পাতা ওড়ে কারো কারো মনে। ‘কার জন্যে ঘন্টা বাজে
বলে এক বেকার যুবক
আচানক কোহিনূর রেস্তোরাঁয় বিবর্ণ চেয়ার থেকে উঠে
পা বাড়ায় পথে, ভেসে যায় জনস্রোতে।
রাত তিনটের পর
নির্জন রাস্তার ধারে কুয়াশার শাল মুড়ি দিয়ে
কোহিনূর রেস্তারাঁ দাঁড়িয়ে আছে ঠায়
অতিশয় পরিশ্রমে অবসন্ন বেশ্যার ভঙ্গিতে,
যার কোঠা ছেড়ে চলে গেছে ফূর্তিবাজ
সকল নাগর।