কোনও এক মধ্যরাতে

নিদ্রার নদীতে নিঝুম ভেসে যাচ্ছিলাম একটানা
প্রগাঢ় নিশীথে। হঠাৎ আশ্চর্য নিঃশব্দ
কলরবে জেগে উঠি। ঘরে নিশুত শয্যায় একলা
আমি, আশেপাশে কেউ নেই, তাহলে
এই শব্দহীন শব্দের উৎস কোথায়? বিস্ময়-বিহ্বল আমি
কান পাতি নিশীথের হৃৎস্পন্দনে।

আমার শ্রুতিতে ভেসে আসে কিছু কথা। কথাগুলো
স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে। সেসব
কথা উঠে আসছে আমার বড় বুকশেলফ্‌ থেকে।
কয়েকটি হৃষ্টপুষ্ট পুস্তক কথোপকথনে
দিব্যি মেতে উঠেছে, বুঝতে কষ্ট হলো না
আমার। ওদের অধিকাংশ বাক্যবাণের
লক্ষ্যবস্তু আমি। একটি গম্ভীর গ্রন্থ ততোধিক
গম্ভীর কণ্ঠে বলে, ‘লোকটা অন্য কোনও শখের জিনিস
না কিনে, রেস্তোরাঁয় এটা সেটা খেয়ে পয়সা
না উড়িয়ে আমাকে চড়া দামে সেই কবে নিয়ে এসেছে
অথচ আজ অব্দি আমার পাতাগুলোয়
ভ্রমণ না করেই রেখে দিয়েছে। জ্ঞান সঞ্চয়ের
কোনও চেষ্টা করেনি। আহা,
ভারি আফসোস হয়, লোকটার কাণ্ডকারখানা দেখে।‘

আরেকটি ভারিক্কি পুস্তক গমগমে কণ্ঠস্বরে
আধবোজা চোখ সামনের দিকে রেখে বলে, ‘যথার্থ
বলেছ ভায়া, এই দেখ, আমাকেও দূরে
ঠেলে রেখেছে ক’বছর ধরে। অথচ
ওই যে দেখছ টিঙটিঙে কিংবা মাঝারি সাইজের,
কয়েকটি মোটাসোটাও বটে, কবিতার কেতাব, সেগুলো
দোকান থেকে এনেই দিব্যি পড়ে ফেলে
মশগুল হয়ে। একবার দু’বার নয়, বারবার। কী জ্ঞান যে
লোকটা পায় সেসব পুস্তকে, সে-ই জানে। লোকটার
আক্কেল দেখে মেজাজ ঠিক রাখাই মুশকিল।

হঠাৎ আমার পাশে-রাখা বইটির শরীরের স্পর্শ পাই;
ঘুমোবার আগে নেরুদার কবিতা পড়ছিলাম,
মনে পড়লো। অস্বীকার করবো না, কবিতার প্রতি
আকর্ষণ আমার অধিক। তা বলে অন্যান্য জ্ঞানের
আভাময় বই আদৌ উপেক্ষণীয় নয় আমার কাছে। জানি না,
বুকশেলফে সাজানো গুরুগম্ভীর পুস্তকরাজি
আমার প্রকৃত মনোভাব বুঝতে পারে কিনা। তাদের
সঙ্গেও খুব অন্তরঙ্গ হয়ে উঠবো, যদি না মৃত্যু চুরি করে নিয়ে যায় আমাকে।
২৫.০১.২০০০