কোথায় লুকিয়ে থাকো নিঃসঙ্গতা নিয়ে? শুয়ে আছো
বিষাদের ঘরে?
আজো কি তোমার মনে অগোচরে জমেছে হে মেয়ে
মন-খারাপের মেঘ? আমার সকল
ভালো-লাগা সিংহাসনচ্যুত; একটি কুঠার, রোদে
তুমুল ঝলসে ওঠা, বার বার করছে প্রহার
আমাকে, তোমাকে
দেখতে পাই না বলে। এরকম হয় না কি, মাঝে-সাঝে তুমি
বসে আছো বই হাতে, হঠাৎ আমার
নিঃশ্বাস তোমার
গ্রীবায় অধরে, পিঠে, স্তনে, নাভিমূলে চুমো খায়
চুপিসাড়ে? আমার শীতল দীর্ঘশ্বাসে বড় বেশি
এলোমেলো হয়ে যায় না কি সমাজতত্ত্বের খাতা,
আধ-পড়া জরুরী বইয়ের পাতা, তোমার চুলের নিঃস্তব্ধতা,
হৃদয়তন্ত্রীর সুর? যখন ঘুমিয়ে থাকো, তখন তোমাকে
যে-দ্যাখে গোপনে বিছানার পাশে একা
দাঁড়িয়ে, সে নয় আমি, আমার ভেতর
থেকে বের-হ’য়ে-যাওয়া কোনো ছায়া; দ্যাখে, শুধু দ্যাখে।
এ শহরে এ ভীষণ অসুখী শহরে
তুমি আছো, খুব কাছে আছো হে অপ্রাপনীয়া,
জ্বলছো হিরের মতো নিত্যদিন, অথচ দেখি না
তোমাকে, যদিও আমার অনেক স্বপ্ন, ঝ’রে যাবে জেনেও সর্বদা
বিনিদ্র কুসুম হয়ে ফোটে তোমাকে ঘিরেই। তারাজ্জলা রাতে
বলেছো, সত্বর তুমি চলে যাবে দূরে;
আমার একান্ত অনুরোধ, অন্ততঃ যাবার আগে
দেখে যাও কী রকম আছি। অন্তর্গত
ব্যাকুলতা গাছপালা, নদীনালা, নিশান্তের হাওয়া
বর্ষার আকাশ আর ময়ূরকে বলে-
আমাদের দু’জনের যে-দূরত্বে ধুধু মরুভূমি
প্রসারিত তাতে
একবার মিলনের মরূদ্যান উপহার দাও। নাটকের
টাঙ্গানো দৃশ্যের মতো হোক তা ক্ষণিক
রঙিন, কখনো অনুতাপে পোড়াবো না হৃদয়ের শস্যাগার।
তোমার এখন
প্রকৃত দেখার জন্যে জ্বলন্ত অঙ্গারময় ক্রোশ
ক্রোশ পথ হেঁটে যেতে পারি,
তোমাকে দেখার জন্যে, হে নবীনা, আরো
কিছুকাল জীবনের ঘনিষ্ঠ উত্তাপে প্রৌঢ়তাকে
উল্টে পাল্টে সেঁকে নিতে চাই
ধুক ধুক বুকে।
তোমাকে দেখার জন্যে শুকনো ডালে চব্বিশটি বসন্ত-গোলাপ
সহজে ফোটাতে পারি, তোমার উদ্দেশে
খুনীদের আস্তানায় দ্বিধাহীন ঢুকে পড়া আজ
কী এমন অসম্ভব কাজ? তোমাকে একটিবার
প্রকৃত দেখার জন্যে প্রাণ বাজি রেখে
স্বৈরাচারীদের
লৌহমুষ্টি থেকে আমাদের একালকে ছিনিয়ে আনতে পারি।