শয্যাশায়ী ছিলাম ক’দিন। বিকেলে
শয্যার পাশে আমাকে কিছু একটা
হাতড়াতে দেখে
ঘরের দেয়াল ভাবল ভ্রম হয়েছে
আমার। আসলে আমি যে
তখন কল্পরাজ্যে কিছু চিত্রকল্প এবং প্রতীক
কুড়োতে মগ্ন তা দেয়াল, লেখার টেবিল,
বুক শেল্ফ্-কেউই ঠিক
ঠাওর করতে পারে নি।
মৃদু হেসে পাশ ফিরে শুতেই
কোথাকার এক ক্ষ্যাপা বাউল ঘরে ঢুকে
দোতারা বাজিয়ে জুড়ে দেয় নাচ। এ কোন্ সাঁই
আমার কবিতার খাতার মরুভূমিতে
সুরের ঝর্ণাধারা মুদ্রিত করতে চায়?
তাকে বারণ করা সাধ্যাতীত ভাবছি,
এমন সময় একজন তরুণ কবি
এবারের বইমেলায় তার কোনো কবিতার বই
প্রকাশিত না হওয়ার দীর্ঘশ্বাসে
আমাকে ডুবিয়ে রাখল কিছুক্ষণ। আমি
তার দীর্ঘশ্বাসের স্বরলিপি টুকে রাখার জন্যে
বলপেন হাতে তুলে নিতেই
সে নিমেষে গেল শৈত্যপ্রবাহে আর
তখনো আমার ঘরে ক্ষ্যাপা বাউল
কখনো ভুল ঝাঁকিয়ে, কখনো পাক খেয়ে
নিয়ে আসে ধু ধু গেরুয়া প্রান্তর, গহন ছায়া।
প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর কে আমাকে অমন ডাকে
বারবার ফাল্গুনের দুপুরে?
কোনো কোকিল অথবা দোয়েল নয়,
যেন এক বুকচেরা আর্তনাদ আপন
শহরের চৌদিক থেকে উঠে আসছে ক্রমাগত;
ব্যাকুল বেরিয়ে পড়ি গলির মোড়ে,
খোলা রাস্তায়। বুলেটবেঁধা বাংলা ভাষার
রক্তস্নানে বিহ্বল আমি
ওর বুক থেকে সীসাগুলো তুলে নিয়ে সেখানে
গুচ্ছ গুচ্ছ পলাশ রেখে দিই নত মাথায়।