কেন তুমি মুখ নিচু করে থাকো সারাক্ষণ? কেন
লোকলোচনের অন্তরালে থাকতে চাও?
তোমার কিসের লজ্জা? কোন্ পাপবোধে আজকাল
তোমাকে অমন দীন ছায়াচ্ছন্ন করে রাখো? কোন্
অপরাধে নতজানু হয়ে থাকো সারা দিনমান?
কেন তুমি ম্লান মুখচোরা হয়ে থাকো সর্বদাই?
না বললেও বুঝি
গলায় কলস বেঁধে নদীর গহনে ভয়ানক চুপিসারে
চলে যেতে চাও তুমি অথবা হঠাৎ
আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভস্ম হতে চাও
কিংবা ভয়-প্রদায়িনী আঁধারে ঘুমের বড়ি খেয়ে
অনবোলা ক্রুর যন্ত্রণার থেকে মুক্তি পেতে চাও।
জানি তুমি পিপাসার্ত পথিকের মুখে
কখনও পারোনি দিতে এক ফোঁটা জলও,
ক্ষুধার্তের ভিড়
তোমার দরোজা থেকে ফিরে গেছে। এমনকি হায়
ঝুলিয়ে হার্মোনিয়াম সুরপরায়ণ
গলায় কখনও বন্যার্তের জন্য পথে ঘুরে ঘুরে
চাঁদা তোলা হলো না তোমাকে দিয়ে। ক্যাম্পে
আহত ব্যক্তির ক্ষতে কোনোদিন বাঁধোনি ব্যাণ্ডেজ।
পাতোনি মাইন ব্রিজে, ওড়াওনি কনভয়
দুদ্দাড় গ্রেনেড ছড়ে, ফ্রগম্যান সেজে
বঙ্গোপসাগরে পারোনিকো ক্ষিপ্র ডোবাতে জাহাজ,
অথবা দখলদার সৈনিকের বুকে
বন্দুকের নল চেপে তার
হৃৎপিণ্ড ঝাঁঝরা করে দেয়া
সাধ্যাতীত জেনেছিলে মুখ ঢেকে অন্ধকারে একা।
কতদিন স্পষ্টত তোমারই
চোখের সম্মুখে শিশু হারিয়েছে প্রাণ, নারী তার
যৌবনের সলাজ আরক্ত মাধুরিমা;
তুমি কাকতাড় যার ভূমিকাও করোনি পালন।
না,তুমি লজ্জায় মুখ আঁধার-নিবাসে
রেখো না লুকিয়ে আর থেকো না অমন
নতজানু হয়ে,
যেমন ভয়ার্ত পাপী ধর্মযাজকের প্রকোষ্ঠের
সম্মুখে একাকী হাঁটু গেড়ে বসে কাঁপায় অধর।
বরং সহজ হও, সমুন্নত হোক গ্রীবা মরালের মতো,
অত্যন্ত উজ্জ্বল হোক চোখ
আবার মোহন অন্ধকারে। হে আমার
কবিতা কল্পনালতা তুমি
ধিক্কারে ঘৃণায় ক্ষোভে কখনও যেয়ো না বনবাসে।
ভয়ানক মারের সাগরে
ভেলা যে ভাসিয়েছিলে, ছিলে
আমার মগজে, ছিলে সর্বদাই রক্তকণিকায়,
অপ্সরার মতো নেচেছিলে
খাতার নিভৃত মাইফেলে সন্ত্রাসের
প্রহরে প্রহরে,
তাই হে আমার সিন্ডারেলা,
বেলা-অবেলায়
তোমারই উদ্দেশে শ্লোকরাজি আজও করি উচ্চারণ।
তোমারই উদ্দেশে
কেমন পুষ্পিত হয় অলৌকিক জমিজমা কিছু
তোমারই উদ্দেশে
আমার হৃদয়ে অন্তহীন শোভাযাত্রা
শূন্যতায়, জড় আর চৈতন্যের মধুচন্দ্রিমায়।