এ কোথায় এসে মুখ থুবড়ে পড়েছি, এ কেমন
আতঙ্ককুন্ডের মাঝেখানে?
শুনেছি যে-শহরে একটি খুনী করে বসবাস,
সেখানে তিনটি গাছ ছদ্মবেশী আততায়ী হয়ে
কী শান্ত দাঁড়িয়ে থাকে বুঝি
তাই এ-শহরে ইদানীং
পথশ্রান্ত মানুষের জন্যে ছায়াময়
বৃক্ষতলও নয় আর নিরাপদভূমি। এ-শহরে
প্রতিটি ফুলের মুখ থেকে
লাল ঝরে অবিরল কাঁচা মাংসের লালচে আর
আজরাইলের
তুহিন নিশ্বাস হয়ে হাওয়া ঘোরে আনাচে-কানাচে।
কারুকেই আমি আজ শোকগাথা শোনাতে আসি নি,
বলতে এসেছি শুধু শোনো
আমার নগর-সংকীর্তন; দ্যাখো, দ্যাখো
ভিখারীর দলে এসে কীরকম ভিখারী হয়েছি। ফুটপাতে
ব’সে আমি ক্লান্তিতে ঝিমাই, ক্ষত থেকে তাড়াই সুনীল মাছি,
চা খাই বিবর্ণ মগে মাঝেসাঝে, দেখি
ঝলমলে মানুষের হাটে
কুমারী প্রসব করে শিশু
রক্তরাঙা, দিনের ধুলায়। কোজাগরী পূর্ণিমায়
খুচরো পয়সা গুনে ট্যাঁকে
গুঁজে রাখি, রাত্রিবেলা চট পেতে শুই। চোখ মারে
নীলিমার তারা;
আমার স্বপ্নের ভেতরেও
ধেয়ে আসে উল্লসিত অজস্র উকুন। মাঝে-মাঝে
ঘুম ভেঙে গেলে টের পাই-কী প্রবল গান গায় অন্ধকারে
শিরায় শিরায় গুহামানবের উত্তরাধিকার।
অবৈধ সন্তান যারা, রোদপোড়া, বৃষ্টিভেজা, তারা জড়ো হয়
রাস্তায় রাস্তায়,
মাথা তোলে ক্রমে, থুতু ছিটোয় দেয়ালে,
সভ্যতার করে বাস খুনখারাবির
বর্ধমান ছায়ায়, কলার চেপে ধরে সমাজের
কখনো কখনো, ফের অস্তিত্বে সফেন নেশা নিয়ে
প’ড়ে থাকে অচেতন। আগুন রঙের ঘোড়া ওদের গ্রীবায়
খানিক নিশ্বাস ফেলে চ’লে যায় দূরে
স্বপ্নভেজা মাঠে খুব দবিজ ঘাসের খোঁজে শিল্পিত আঙ্গিকে।
কখনো এমনও ভাবি এ-শহর থেকে
পালিয়ে কোথাও
নদীতীরে জেলেপাড়া কিংবা দূর তাঁতীর পল্লীতে
খুঁজে নিই নিরালা আশ্রয়; কিন্তু হায়,
নিরাশ্রয় পায়ে পায়ে ঘোরে
আমার সর্বদা; তাই শহরেই এক কোণে মাথা গুঁজে থাকি,
স্বপ্ন দেখি, মধ্যরাতে বহুদূর থেকে
নদী এসে আবর্জনাস্তুপ
ত্বরিৎ সরিয়ে
পবিত্র ধুইয়ে দেবে শহরের মুখ।।