নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

এ কেমন বৈরী তুমি

ক’দিনই-বা আছি আস্তানায়, তবু কেন বারংবার তবু কোন রাজা
আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ? বলে না তোমার দ্বারী, আপনার কোট
দিন অনুগ্রহ করে, হ্যাঁ মেহেরবান রেখে দেবো হ্যাট কোট।
ক্ষমা করো রাজা
আমার তো কোটই নেই। তোমার দরোজা বন্ধ দেখে দিনরাত
কেমন গুলিয়ে যায় সব, তোমার ছায়াবিলাসে
নই তো শরিক আমি। দ্যাখো তবু ১৯৭৩ জন শামসুর রাহমান
ক্রল করে আসছে এখানে
কত দূর-দূরান্তের বাসস্টপ থেকে,
১৯৭৩ জন শামসুর শাহমান
আসছে বাদুড় হয়ে, আসছে মিছিল করে কাঁপিয়ে শহর
১৯৭৩ জন শামসুর রাহমান
হচ্ছে জড়ো সিংহদরোজায়, হৃদয় ঝুলিয়ে দিচ্ছে গাছে,
অনুভূতিমালা, স্বপ্ন ইচ্ছা দিচ্ছে বিছিয়ে ট্রাফিক আইল্যাণ্ড
পাথরে নুড়িতে ঝর্ণায়, ব্যাঙ্কের দরোজায়।
তাদের মগজ থেকে ঝাঁক ঝাঁক পাখি উড়ে গিয়ে বসে
অন্ধকার তোমার মিনারে, কাঁধ থেকে মাছ ঝরে কিংবা পাতা।
অকস্মাৎ লাগে ধন্দ; শোনো রাজা বাস্তবিক হার্মলেস আমি।

ভাবতে কেমন লাগে, আমার নিজের বাড়িঘর,
গাছপালা, কার্ণিশের কবুতর মুদির দোকান
-সবকিছু অগোচরে। কতক্ষণ এভাবে অন্ধের
মতো পথ হাতড়ে চলা যায়? অপসৃয়মান দেয়ালের
দিকে যাই, বিস্ফারিত চক্ষুদ্বয়, আশেপাশে তবু
কিছুই যাচ্ছে না দেখা। আমি তো হাঁটছি সারাক্ষণ
অথচ এগোচ্ছি নাকি পিছিয়ে পড়ছি ক্রমাগত,
সঠিক বলতে অপারগ। বিষম হোঁচট খেয়ে খেয়ে বড়ো
ক্লান্ত; কখন যে খানাখন্দে পড়ে যাই, কাদাজলে
খাই খাবি অথবা সাপের লেজে পা দিয়ে ফেলি হঠাৎ-
এই দুর্ভাবনা দিচ্ছে হানা মগজের কোষে। দৃষ্টি-
শক্তি ঠিকই আছে, তবু কেন অস্পষ্ট বেবাক দৃশ্য?
বস্তুত; চাদ্দিক আজ কুয়াশায় ঢাকা। সতর্কতা
এখন একান্ত কাম্য। নইলে হয়তো অন্ধকূপ গিলে
খাবে, হয়তো স্কন্ধকাটাদের সঙ্গে হবে ঠোকাঠুকি।
টর্চও নেই, কে নিরীহ পান্থ কেবা দস্যু, বোঝা দায়।

১৯৭৩টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে,
১৯৭৩টি শহরকে গিলে খাচ্ছে আঁধার ভূতল
১৯৭৩ জন ভেসে যাচ্ছে কী বিশাল ড্রেনে
১৯৭৩ টি নদীর হিংস্রতা ভয়ানক যাচ্ছে বেড়ে,
আমি দেখছি না।

আমার অগ্রজ
অথবা অনুজ
শক্রমিত্র, প্রতিদ্বন্দ্বী রোগী, চিকিৎসক,
আমার জনক-জননীকে
আমার সন্তান-সন্ততিকে দেখতে পাচ্ছি না আমি,
কাউকেই দেখছি না। রাজা তুমি আমাকেও তোমার মতোই
অন্ধকারে রেখে দিতে চাও?
এ কেমন বৈরী তুমি আমার ফোয়ারা
বিষম পাথরচাপা দিয়ে দিলে রাজা?