চাইকোভস্কির সোয়ান লেকের
প্রধান রাজহংসীর
ভঙ্গি আত্মস্থ ক’রে এগিয়ে
এলে
আমার কাছে। বললাম বটে,
কিন্তু এই অঙ্গসঞ্চালনে
সচেতন
প্রয়াসের কোনো চিহ্নই নেই।
পদ্মের উন্মীলনের মতো
সহজ আর স্বাভাবিক তোমার
হাতের নড়া,
গ্রীবার মুদ্রা।
তোমার হাতে লৌকিকতা
দোয়েলের মতো সঙ্গীতমুখর;
ট্রের বিস্কুট, মিষ্টান্ন আর
আপেলের ফালি
সন্ধ্যার গভীরতাকে আমার
চোখে
ভিন্ন মাত্রায় স্থাপন করেছিল,
মনে পড়ে। তোমার
ঈষৎ অসুস্থতা তোমাকে
আরো বেশি
মোহনীয় করার শপথ
নিয়েছিল যেন। টেবিলে রাখা
অখণ্ড
গীতবিতান তার সকল
ঐশ্বর্যকে
উজাড় ক’রে দিতে পারে
এত সহজে তোমার কণ্ঠে,
ভাবিনি।
আমি প্রায় কিছুই না খেয়ে
চায়ের কাপের দিকে হাত
বাড়াই
একটু চলকে উঠে সোনালী
চা, চুমুক দিয়ে তরল উষ্ণতা
জিভে ধারণ ক’রে তোমাকে
দেখে নিই এক ঝলক। এই
নিবিড় ব্যাকুল
তাকানো বহু মাইলের
দূরত্বকে মুছে ফেলে
লহমায়। তুমি আমার দিকে
তাকিয়ে হাসলে, আমার
সম্মুখে
খুলে গেল সুলেমানের
রত্নভাণ্ডারের দ্বার। তোমার
পায়ের কাছে
আমার শিষ্টাচার শীয়ামিজ
বেড়াল। তোমার নাভিমূল
ছুঁয়ে
একটি প্রজাপতি আমার
অধরের কম্পনকে জানিয়ে
দেয়
অপরূপ সরোবরের রহস্যময়
কামনা। প্রজাপতির বার্তা
আমি আমার
নিঃসঙ্গতার ছায়ায় লুকিয়ে
সুজনি-ঢাকা তক্তপোশ ছেড়ে
উঠে দাঁড়াই।
আধ ঘন্টার লোকাচারস্পৃষ্ট
এই একটুখানি দেখা
আমার কাছে হ’য়ে ওঠে
মোহন সবক। তোমার
দু’চোখের
চাউনি দর্শনের জটিল সূত্রকে
বেনেকাব ক’রে দেয়,
তোমার যুগল ভুরুর
সন্ধিস্থলের রহস্যময়তা
ইতিহাসের
কোনো লুপ্ত অধ্যায়কে
জাগিয়ে তোলে এবং তোমার
হাসির
বিদ্যুচ্চমক আমাকে পথ
দেখায় বিভ্রান্তির
গোলকধাঁধায়। তোমার
আবৃত্তি আর গান কী ক’রে
যে আমাকে
স্বদেশকে ঘনিষ্ঠ চিনতে
শেখায়, এ এক রহস্য আমার
কাছে।
২৪.৩.৯৪