আবদুল গাফফার চৌধুরী বন্ধুবরেষু
প্রতি বর্গমাইলেই ঢের ভস্মস্তূপ; হতস্তত কত
বিষণ্ন করোটি পড়ে আছে; ধুলোবালি, রৌদ্র জ্যোৎস্না,
বৃষ্টি ঝরে ওদের ওপর। মনে হয়,
বিভ্রমবশত, হয়তোবা কোনওদিন
ধুয়ে মুছে যাবে
অগণিত ভুল মানুষের ঝাড়ফুঁকে স্বদেশের
অনেক গৌরবগাথা, শত স্মৃতিসৌধ,
শহীদ মিনার আর সদ্য আবিষ্কৃত বধ্যভূমি!
প্রগতি হোঁচট খেতে খেতে এখন ভীষণ খোঁড়া
ঘোড়া যেন, কেবলি ঝিমোয়
জীর্ণ আস্তাবলে আর কল্যাণ কী দ্রুত
হয়েছে বিলীন অস্তাচলে সেই কবে একজন দীর্ঘকায়
মহান পুরুষ এক ঝাঁক
ষড়যন্ত্রপরায়ণ বামনের ক্রূর নিচতায়
হারিয়েছিলেন প্রাণ, অনন্তর জন্মভূমি থেকে
দীপ্তি দেশান্তরী আর শান্তিও ফেরারী।
যদি সে মহান পুরুষের হয় আবির্ভাব দৈবাৎ আবার,
তাহলে নিশ্চিত তিনি স্বগত ভাষণে বিড়বিড়
করবেন অন্তরালে বড় একা-‘এ দেশ আমার নয়, এই
চেনা সহচরবৃন্দ আমার এমন
আশ্চর্য অচেনা কেন? এ কেমন রূপ করেছে ধারণ
দলে দলে? আমার আত্মজা
চাটুকার আর স্তাবকের বন্দনায় মেতে
হাঁটছে আমারই মতো ফাঁদপাতা কোনও
কোনও ভুল-কন্টকিত পথে। আমার স্বপ্নের দেশ
এমন উধাও হবে, ভাবিনি কখনও। আর কত
আত্মাহুতি চায় এই পোড়া মাটি? হায়,
এত অন্ধকারময় বাংলাদেশ অচেনা আমার!’
১৪.৮.৯৯