সেই কবে থেকে পথ চলছি, কখনও
চলছি সমঝে সুমঝে, কখনও বেপরোয়া
আমার পা ফেলার ছন্দ। হোঁচট যে খাচ্ছি না,
এমন নয়। কখনও কখনও অতর্কিতে
কাঁটা বিঁধে রক্তাক্ত আমার পা। তখন মনে হয়,
কোথাও গাছতলায় বসে খানিক
জিরিয়ে নিই। কিন্তু তা হওয়ার জো নেই। খোঁড়াতে
খোঁড়াতে চলতে থাকে আমার পদযাত্রা।
ওপরের দিকে তাকিয়ে এক সময়
আকাশকে দেখতে পাই নীল সমুদ্রের মতো।
মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। ইচ্ছে হয়
হাত বাড়িয়ে ছুঁই দূরের আকাশকে। কখনও
হঠাৎ আবার চোখে পড়ে আকাশের
আলাদা চেহারা, যেন এক রাগী দেবতা
মেতে ওঠে অপ্রত্যাশিত হিংস্রতায়। মনে হয়,
এক্ষুণি আমাকে অজস্র খণ্ডে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলবে
জ্বলন্ত বর্শা কিংবা নির্দয় পাথর। কেন যেন
ভাবি, তার ফুৎকারে ছেঁড়া কাগজের একরত্তি
টুকরো মতো একরোখা হাওয়ার চড়চাপড়
খেতে খেতে অজানা কোথাও গায়েব হয়ে যাবে।
আমার এই চলার পথে ক্ষণে ক্ষণে
কত কিছুইতো আচমকা ভয় দেখায়
আমাকে। দুঃস্বপ্নের পর দুঃস্বপ্ন কামড়ে ধরে, আজব
দৈত্য-দানো আমার বিপন্ন অস্তিত্ব নিয়ে প্রায়শ
লোফালুফি করে। আমি কি সব সময়
ওদের অসহায় ক্রীড়নক হয়ে থাকবো? আশ্চর্য আমার
এই মন! কোনও বিরূপতাই ওকে যাত্রা থেকে
থামিয়ে রাখতে পারে না, এমনই অদম্য এই মন।
এক গা ছমছম করা জায়গায় এসে
থমকে দাঁড়াই। রোদ চুমো খাচ্ছে চতুর্দিকে ছড়ানো
অনেক মাথার খুলি এবং হাড়গোড়কে। আমার
আগে যারা অনেক বাধাবিপত্তি, অনেক জুলুম সয়ে
এখানে এসে পৌঁছে ছিলেন, তাদের
সংহার করা হয়েছিল এখানে হায়,
কাঙ্ঘিত গন্তব্যে তারা পৌঁছতে পারেননি
অগ্রগতির শক্রদের হিংস্রতায়।
আমি কি এই ক্ষতবিক্ষত পা কাছের হ্রদের
স্বচ্ছ পানিতে ধুয়ে আমার যাত্রা
শেষ করতে পারবো? পৌঁছতে পারবো
সেই স্থানে, যেখানে প্রতিটি ভবন ধারণ করছে
স্বর্ণচূড়া, যেখানে শান্তি ও কল্যাণের জয়গাথা
সবার কণ্ঠে। আমি কি শেষ অব্দি পৌঁছতে
পারবো সেখানে? জানি না তার আগেই
বন্য হিংস্রতার শিকার হবো কিনা এখনও জানি না।
১৯.১২.৯৯