এখন তোমরা কেউ আমাকে খামোকা দেরি করিয়ে দিও না,
এক্ষুণি আমার কিছু কেনাকাটা করবার আছে।
পকেটে রয়েছে যাবতীয় সামগ্রীর ফর্দ সুদীর্ঘ, উজ্জ্বল,
অবশ্য তালিকা না হলেও চলে। কি কিনতে চাই,
আপাতত কী কী কেনা দরকার
তার পাক্কা একটা হিসেব
গোপনে করছে খেলা মনের ভেতর।
এখন তোমরা কেউ আমাকে খামোকা দেরি করিয়ে দিও না।
তোমাদের একজন কেউ হাত বাড়িয়ে দিলেই
আমাকেও ধরতে হবে হাত,
আসন জোটাতে হবে তোমাদের সোনালি আড্ডায়।
আসবে কথার পিঠে কথা,
সন্ধ্যা নেবে শুষে
দিনের গালের রং, গুলতানি, হো-হো-হাসি, অবাধ হুল্লোড়,
চরিত্রহনন, কবিতার শব-ব্যবচ্ছেদ, কবির প্রণয় নিয়ে
ঈষৎ মস্করা
ইত্যাদিতে ক্ষয়ে যাবে অনেক প্রহর, পুনরুক্তিময়, কিন্তু,
এক্ষুণি আমার কিছু কেনাকাটা করবার আছে।
দ্যাখো, ভালো করে দ্যাখো, আমার ভুরুর এলাকায়
এখন শিশির নেই ফোঁটা ফোঁটা, আমার শরীরে
বস্তুত তোমরা কেউ আর
বকুলের গন্ধ খুঁজে পাবে না এখন। আজকাল
আমি আর মধ্যরাতে ধীরে সুস্থে ঘুরে বেড়াই না ইতস্তত
রাস্তায় রাস্তায়,
ফেলি না পা বন্ধ দোকানের ছায়ায়, স্তম্ভিত মাঠে।
এখন ব্যস্ততা কাঠবিড়ালীর মতো সারাদিন
লাফায় আমার শিরা-উপশিরাময়; আমাকে অনেক দূর
থেকে দেখে আমার শৈশব
সকৌতুক খোলা ছাদে পা দোলাচ্ছে ফকফকে জ্যোৎস্নায় কেবলি।
অকস্মাৎ একজন বিপন্ন পথিক
বাঁচাও বাঁচাও শব্দে
আমার মুখের রোদ মুছে নেয়, ভেঙে ফ্যালে আমার বুকের
গোলাপের ঝাড়।
আমি তো পুলিশ নই নাগরিক দ্বীপে,
তবু সে শব্দের পিছু পিছু
ছুটে যাই, দিগ্ধিদিকে ঘুরে কিছুক্ষণ ফিরে আসি ক্লান্ত, ব্যর্থ।
আমার তো খুব বেশি দেরি করা চলবে না। অথচ অমন
আচমকা বিপন্নতা কিছু
কখনো না কখনো আড়ালে
আমাদের প্রত্যেকের জন্যে জমা থাকে।
একজন বলেছিল, ‘আমাকে মনের মতো কিছু দাও তবে’,
আমি দশ দিক তন্ন তন্ন করে দুঃখকে একাকী
তার মুখোমুখি এনে বাসিয়ে দিলাম।
একজন আমার নিকট
রোদ্দুরের পূর্ণিমার পদাবলি চেয়েছিল শুনতে একদা,
আমি তাকে কেবলি আবৃত্তি
করিয়েছি রাত্রিদিন আঁধারের ভাষা। আই আর
কারুর জন্যেই কিছু করবার কথা ভাবি না কখনো।
শুধু ভাবি অবেলায়,
এক্ষুণি আমার কিছু কেনাকাটা করবার আছে।
কী কিনবো আমি? তরমুজ ডাব অথবা আঙুর,
কফির উজ্জ্বল কৌটো, স্বপ্নবৎ টেরিলিন শার্ট, ট্রাউজার?
এই তো দেখছি কাছে দূরে শহরের
প্রতিটি দোকান
বারবনিতার মতো অপেক্ষমাণ অথচ বড় উদাসীন-
আমি যা’ কিনতে চাই কখনো তা নয় লভ্য কোনো দোকানেই।