ভোরবেলা আবীরমাখা রাস্তার
মোড়ে দাঁড়িয়ে
আমি মেঘনার তীরভূমি আর
পাখি-ছাওয়া চরের কথা
ভাবছিলাম। আমার মনে
পড়ছিল বাস্কেটবল
খেলোয়াড়ের ত্বরিৎ
লাফিয়ে ওঠার মতো ঢেউ,
অনেকগুলো নৌকার
উজান যাত্রা, নানা রঙের
পাল আর
হঠাৎ তরুণ রুইয়ের
ঝলসানি। পলাশতলীর তীরে
দাঁড়ানো
যমজ দু’টি অস্পষ্ট গাছের
কথাও
আমার স্মৃতিতে ছায়া বিস্তার
করছিল।
তন্ময় আমি, ট্রাফিক তখনো
ক্রুদ্ধ জন্তুর মতো
গর্জে ওঠেনি। একটি পাখি
ঈষৎ সুর ঝরিয়ে উধাও
কোথাও; কে কখন
আমার হাতে একটি বাদামি
খাম ধরিয়ে দিয়ে গোয়েন্দার
ভঙ্গিতে হাওয়ায় মিশে গেলো
বুঝতে পারিনি। সেই খাম
আমার হাতে কবুতরের পাখার
মতো
কাঁপছে অভিমাত্রার
আকর্ষণে। বুঝলাম, নিজেরই
অজান্তে
এক হিরন্ময় বার্তা পৌঁছে
দেওয়ার গুরুভার বইছি।
কাকে বা কাদের এই
খামে-ঢাকা বার্তা আমাকে
পৌঁছে দিতে হবে, জানি না।
অন্তর্গত কুয়াশার
আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা
আলো আমাকে
জানিয়ে দেয়, ওরা অনেকজন
অনেকক্ষণ ধরে প্রতীক্ষারত
আমার হস্তধৃত বার্তার জন্যে।
আমার ভেতরকার
বার্তাবহ উদ্দাম চঞ্চল হয়ে
ওঠে আরবী ঘোড়ার পেশীর
মতো।
একটি পাখি কাঁধে বসে
আমাকে বলে, ‘এই বাদামি
খাম
আমাকে দাও, চঞ্চুতে গেঁথে
নিয়ে যাই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়।
পাখির কথায় কর্ণপাত না
করে
আমি হাঁটতে থাকি সামনের
দিকে। ভোরবেলার হাওয়া
মিনতি জানায় বার্তাবহ
হওয়ার। আমি তার মিনতি
অগ্রাহ্য করে বাদামি খাম ধরে
রাখি শক্ত মুঠোয়।
দূরে কোথাও অনেকগুলো
ঘন্টা একসঙ্গে বাজতে থাকে,
যেন আমার
পূর্বপুরুষদের কণ্ঠস্বর।
বনজ্যোৎস্নায় বিলুপ্তপ্রায়
কৌমের বসন্তদিনের নাচ,
আমার মাথার উপর
দেবদূতের মুখমন্ডলের মতো
নিষ্কাম চাঁদ।
হেঁটে যেতে যেতে আমার পা
দু’টো ভীষণ ক্লান্ত রক্তবমনে,
আমার দু’চোখ জুড়ে নামছে
মহাস্থানগড়ের ঘুম,
খর তৃষ্ণায় ফেটে যাচ্ছে বুক।
হায় বিষাদসিন্ধু, তবু আমাকে
পৌঁছতে হবে
সুবর্ণ নদীর সেই মোহনায়,
যেখানে
হিরন্ময় এক বার্তার জন্যে
সেই কবে থেকে প্রতীক্ষারত
অগণিত মানুষ, যাদের পায়ের
উপর দিয়ে বয়ে চলেছে
আদিম জলধারা।
১৩.৩.৯৩