একটি বিশেষ তারিখ খসে-পড়া নক্ষত্রের মতো
লুটিয়ে পড়েছিল আমার বিস্মরণের তিমিরে। অথচ
সেই তারিখের অন্তঃপুরে রয়েছে
যে-ঘটনা, তা সর্বক্ষণ জ্বলজ্বল করে চেতনায়।
চার বছর আগে সেই ভুলে যাওয়া তারিখে তোমাকে প্রথম
দেখেছিলাম এক পাঁচ তারা হোটেলের লবিতে।
তোমার চোখে চোখ রাখার মুহূর্তেই মনে হলো
এই চোখই আমার ধ্রুবতারা। তোমাকে
দেখার আগেই আমার কিছু টুকরো সংলাপের সাঁকো
তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ পর আমার
ঝলমলে আলো এবং অনেক উৎসুক দৃষ্টি থেকে
নিজেদের সরিয়ে নিয়ে ছায়াচ্ছন্ন এক তপোবনে
প্রবেশ করেছিলাম সন্ধ্যারাতে। সেখানকার গাছ-তরুণীরা
আমাদের স্বাগত জানাল পুষ্পল হাসিতে কৃতজ্ঞতায়
আমার বুকের ভেতর একটি সরোবর ছলছলিয়ে উঠল,
আমার নির্বাক মুহূর্তগুলো তারাভরা
আকাশের নিচে অসীম নিস্তব্ধ গীতিকবিতায় রূপায়িত হলো।
নীরবতা এমন আশ্চর্য বাঙ্ময় হয়ে উঠতে পারে,
এ আমি অনুভব করেছিলাম প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে।
মনে পড়ে সে রাতে তপোবনের উল্লসিত গাছ-তরুণীদের
উদ্দেশে বলেছিলাম, তোমরা কি
সাজাবে আমাদের গোপন বাসর? কেবল
তোমরাইতো সাক্ষী রইলে মিলনের।
ক্যামেলিয়া হাওয়ায় ঈষৎ দুলে স্বর্ণচাঁপাকে কাছে ডেকে
শুভেচ্ছা জানালো আমাদের।
সেই তারিখটিকে আমি এঁদো ডোবায়
ফেলে দিয়েছি ভেবে তুমি অভিমানে ডুবে আছো।
ক্যালেন্ডারের সেই তারিখটাই কি সব? ঘটনার
অনুপুঙ্খগুলো কি কিছুই নয়? বেদনা তোমাকে
কুরে কুরে খাচ্ছে, বুঝতে পারি। কিন্তু একটি তারিখের
মরুঝড় দিয়ে কেন একটা শতচ্ছিন্ন কাগজ করে তুলছ
হৃদয়ের বসন্ত ঋতুকে? তোমার
অভিমানের সামনে আমি নতজানু তবু
জেনে রেখো প্রত্যহ ভোরবেলা যে আলো লুটিয়ে পড়ে পৃথিবীতে
তাকে আমাদের মিলনের দিন ভেবে প্রতিদিন তার মুখ মুখ চুম্বন করি।