নিঝুম দুপুরবেলা একটি কফিন ছুঁয়ে আমি সরে যাই
অনেকের চোখের আড়ালে।
কব্জির ঘড়িতে দেখি আড়াইটা বাজে। শুকনো ডালে
গাঢ় নীল পাখি ডেকে ওঠে, যাকে চাই
সে নেই কোথাও কাছে, তবু মনে হয়
দুপুরের অগাধ রোদ্দুরে মিশে আছে,
মিশে আছে বুনো জ্যোৎস্নাপ্লুত মাঠে সকল সময়।
যেখানে কফিন স্তব্ধ বাগানের ক্ষয়া চারাগাছটির কাছে,
সেখানে অনেক মুখ কী যেন খুঁজছে সারা বেলা,
শূন্যতার নির্মোহ নিবাসে
কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য কাহিনীর বিস্তারিত খেলা
দেখে নিতে চায় ক্লান্ত দুপুরের তন্দ্রাশ্রিত স্বপ্নের আভাসে।
আড়াইটা বাজে, বেজে যায়। একটি কফিন ছুঁয়ে দূরে
কোথাও আড়ালে ছায়াপ্রায়
হয়ে যাই, দুপুরের রঙময় কুকুরটা বারান্দায় গভীর নিদ্রায়
কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে। কেউ কেউ যায় অন্তপুরে,
কেউবা বিদায় নেয় আস্তেসুস্থে হাত ঝাঁকুনিতে।
একটি গোলাপি স্যুটকেশ পড়ে আছে এক কোণে, সবখানে
কান্নার ব্যাপক দাগ, প্লেট, চামচ, চায়ের কাপ কুলুঙ্গিতে
পোহায় বিশ্রাম, কোকিলের অন্তর্ধানে
অকালে উজাড় হলো যত্নের বাগান। দূর পথে
কে যেন বাজায় বাঁশি, সুরে অসমাপ্ত গল্প বাজে,
দোলে শূন্য খাঁচা দোলে জগৎ সংসার, কোনোমতে
সামনে সুমলে নিয়ে নিজেকে জড়াই তুচ্ছ কাজে!
একটি কফিন ছুয়ে নির্বোধের মতো মনে-মনে অনর্থক
আওড়াই কিছু কথা আর
খামকা ঘড়িটা দেখি ঝাপসা চোখে, চোখের পাতার
বিবাগী কম্পনে বেদনার তুহিন স্ফুলিঙ্গ ধ্বক
ধ্বক করে; বেলা আড়াইটা ঘরে, বাগানে, উঠোনে
বেদনার মতো স্তব্ধ, অদৃশ্য কাউকে বলি, ‘আসি
তাহলে আসি হে বন্ধু, আবার আসবো’। অন্ধকার গৃহকোণে
আরাম কেদারা গায় শূন্যতার বিশদ বেহাগ। অট্রহাসি
জেগে ওঠে বাড়িটার অন্তঃস্থল থেকে। সত্যি কি আসবো ফের?
গেট খুলে দাঁড়াবো এখানে ক্ষণকাল?
পাবো কি আবার খেই সেই অসমাপ্ত সংলাপের?
গেট খুলি; বাইরে বিস্তৃত পথ, প্রতারক ব্যস্ততার জাল।