কনকনে শীত সন্ধ্যায় একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী
দেখতে গিয়েছিলাম। নামজাদা অনতিতরুণ
আলোকচিত্রীর অনেকগুলোর ফটোগ্রাফ
দেখবার সুযোগ কে হারাতে চায়
এবং সেই ফটোগ্রাফার যদি হন
বিশেষত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কেউ।
আলোকচিত্রমালায় সৃজনশীলতার স্পর্শ
আমার নান্দনিক বোধকে উদ্দীপিত করে, মুগ্ধতায়
বুঁদ হয়ে থাকি বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ
একটি ছবি আমাকে কাদাখোঁচার ধরনে
অসম্ভব ঠোকর মারে। সেই ফটোগ্রাফ নির্লজ্জ, ন্যাঙটো
গৌরবে তুলে ধরেছে এমন এক সংবাদপত্রকে,
যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, জাতিসত্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা
এবং প্রগতির নাছোড় দুশমন। একাত্তরের
শহীদ মুক্তমতি বুধগণ আর অন্যান্য বুদ্ধিজীবী, যাঁদের
লাঞ্ছিত করে সেই পত্রিকা বারংবার,
আমার উদ্দেশে বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে
বললেন যেন প্রদর্শনী কক্ষের বুক চিরে, ‘প্রতিবাদ করো।
শিল্পীকে আমি ছবিটি সরিয়ে ফেলতে সবিনয়ে
অনুরোধ জানালে তিনি আমাকে
মানবতার কিছু সবক দিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে
নিজের জেদের ঝুটি আঁকড়ে রইলেন। উন্নাসিক, কলাকৈবল্যবাদী
অধ্যাপকের ঢঙে দর্শকদের জানিয়ে দিলেন
রাজনীতি ধুলোয় গড়ায় আর মানবতার অধিষ্ঠান
আকাশছোঁয়া পর্বতচূড়ায়। পেরুবিষয়ক
একটি ছবি তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন ক’জন তরুণ-তরুণীর কাছে।
আমার মুখের ভেতর তখন থুতুর লাভা, থুতু সেই
আপত্তিকর পত্রিকার ফটোগ্রাফের দিকে না কি নিজের সত্তায়
ছুঁড়ে দেবো স্থির বলতে না পেরে একটি শিং-অলা
ক্ষুব্ধ হরিণের মতো প্রদর্শনী-কক্ষ থেকে নীরবে বেরিয়ে গেলাম।