একজন মৃতের একটি বই পড়ছি ক’দিন
ধ’রে আমি অত্যন্ত নিবিষ্ট মনে। প্রতিটি অক্ষর
বড় তীক্ষ্ম চোখ হয়ে তাকায় আমার দিকে, টানে
কাছে, যেন মায়াবী অরন্যে নিয়ে যাবে ইসারায়।
এ-বই আমার চোখে পড়েছিলো মৃত তরুণের
পড়ার টেবিলে গোধূলিতে। আমি ওর অনুজের
কাছ থেকে, মনে পড়ে, কিছুকাল পরে দ্বিপ্রহরে
ধার নিয়েছিলাম বইটি প্রায় অপরাধী সেজে।
যখন বইটি পড়ি মধ্যরাতে খুব নিরিবিলি,
কে যেন পেছনে এসে নিঃশব্দে দাঁড়ায়। ঠিক ভয়
নয়, তবে কেমন শিরশিরে অনুভূতি অন্ধ কুপ
থেকে উঠে আমাকে জড়ায় সরীসৃপের ধরনে।
মৃত সে তরুণ বইটি কি আদ্যোপান্ত পড়েছিলো
ছুটির দুপুরে কিংবা রাত জেগে? নাকি কিছু প’ড়ে
রেখেছিলো ফেলে কোনোদিন শেষ করার আশায়?
আমি তার মুখের আদল খুঁজি শ্রাবণ হাওয়ায়।
রাত্তিরে বৃষ্টির ছাঁটে ঘুম ভেঙে। আমার চেয়ারে,
মনে হয়, কে যেন পড়ছে ব’সে গোপনে সে-বই।
ওর দিকে এগোতেই শূন্যতা, কেবল সে পুরানো
পেপার-ব্যাকের পাতা জুড়ে তার আঙুলের দাগ।
প্রত্যহ অফিসে যাই, কখনো কখনো মফঃস্বলে,
কবিদের মৌচাকের মতো আসর কখনো টেনে
নিয়ে যায়; যেখানেই যাই, পাতা ওড়ে, সে বইয়ের
রহস্যের তন্তুময় পাতা ওড়ে মনের ভেতরে।
বইটি আমার পড়া হয়ে গেছে কবে; ভাবি, মৃত
তরুণের অনুজকে ডেকে এখুনি ফেরত দিই,
অথচ হয় না দেয়া। ছলছলে চোখের মতন
একটি পেপার-ব্যাক জেগে থাকে আমার টেবিলে।।