একজন বুড়ো সুড়ো লোক বারান্দায়
বসে দেখছেন বিকেলের স্তব্ধ রোদ ঈষৎ কাঁপিয়ে এক
বেগুনি রঙের পাখি নিয়েছে বিনম্র ঠাঁই গাছের শাখায়।
লোকটার মাথায় বিরল শাদা চুলে
হাওয়া মৃদু খেলে যায়। ক’জন বালক
বালিকা আনন্দ হয়ে খেলছে গলিতে। শৈশবের
খেলা দেখে ভাবলেন ভদ্রলোক তার ছেলেবেলা
ভুলেও কখনও আর ফিরে আসবে না।
কিছুক্ষণ পরে সেই বৃদ্ধের উৎসুক চোখে পড়ে-
তরুণ তরুণী হেঁটে যাচ্ছে হাত ধরাধরি করে
যুগ্মতায় গাঢ় অনুরাগ নিয়ে। বুড়ো লোকটার
কানে দীর্ঘশ্বাস বলে হতাশার স্বরে-
তোমার যৌবন আর আসবে না ফিরে
বাজিয়ে মদির রাঁশি কোনওকালে। তোমার এ জরাগ্রস্ত হাতে
রাখবে না হাত কোনও প্রেমময়ী তরুণী কখনও। ফাঁকা দৃষ্টি
নিয়ে তিনি নিশ্চুপ থাকেন বসে একা বারান্দায়।
এখনই নামবে সন্ধ্যা; ভাবেন সে বৃদ্ধ, যা যা ছেড়ে
গেছে তাকে সময়ের নানা বাঁকে, তার
কিছুই কখনও ফিরে আসবে না। এখন তো তার জন্যে কবরের
হাতছানি ছাড়া কিছু নেই। মৃত্যু ফিরে
আসবে কেবল নানা ছদ্মবেশে, যতদিন প্রাণ
আছে এই এই ক্ষয়িষ্ণু শরীরে। তবু তিনি,
সেই বৃদ্ধ, রৌদ্র-ছায়া, গাছের সবুজ পাতা, ক্যামেলিয়া আর
গোলাপের হাসি আর তারার রূপালি মহফিল
এবং বালক-বালিকার খেলা দেখে, পুরনো দিনের সুর
শুনে অবশিষ্ট আয়ু সুস্মিত কাটিয়ে দিতে চান। অকস্মাৎ
তার চোখ কেন যেন অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে যায়
আর বুকে জেগে ওঠে বোবা হাহাকার।