একজন বুজুর্গের কাছে

একদিন একজন রূপালি-চুল বুজুর্গের কাছে এলো
একটি লোক। তার হাতে কয়েকটি
ম্লান খাতা। খাতাগুলো সে ধ’রে আছে মমতায়,
যেন পরম ধন তার। সে তাজিমের সঙ্গে
খাতা কটি বুজুর্গের হাতে অর্পণ ক’রে
বলল, ‘যদি মেহেরবাণী ক’রে আমার এই কবিতাগুলো
প’ড়ে আপনার অভিমত দেন, কৃতজ্ঞ থাকব।‘ লোকটির চোখে
প্রত্যাশায় দীপ জ্বলজ্বল করছিল সেই মুহূর্তে।

লোকটি অভিমান মেশানো স্বরে বলল, ‘একজন কবির কাছে
নিয়ে গিয়েছিলাম আমার খাতাগুলো।
তিনি কয়েক পাতা উল্টেপাল্টে জানালেন, ‘কী লাভ
জঞ্জাল জড়ো ক’রে? বরং চাষবাস করুন গে,
দোকানদারিতে মন দিন। এসব লিখে নিজের জীবনটাকে
বরবাদ করবেন না! একজন সমালোচকও প্রায়
একই ধরনের কথা শুনিয়ে দিলেন। আখেরে
আপনার কাছে এলাম সত্যের সন্ধানে।‘

বুজুর্গের আলখাল্লার আস্তিনে ঝুলছিল সূর্যোদয়;
তিনি ধৈর্য ধ’রে পাঠ করলেন
বেশ কয়েকটি পদ্য
লোকটির দিকে উদার দৃষ্টি
মেলে দিয়ে বললেন গাঢ় কণ্ঠস্বরে, “অনেকে
অনেক গাছই লাগায়, কিন্তু সব গাছে ফুল ধরে না।
বহু সাধক, বহু সুফী আছেন, কিন্তু একমাত্র মনসুর হাল্লাজই
অকুণ্ঠ বলতে পারেন, ‘আমিই খোদা।‘ তুমি যা’ লিখেছ
তার প্রশংসা শোনার বাসনা ত্যাগ ক’রে লিখে
যে-আনন্দ পেয়েছ, সেই সঞ্চয়টুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো।“

লোকটি বিদায় নেওয়ার পর রূপালি-চুল বুজুর্গ
নিজস্ব সাধনা এবং সিদ্ধির দূরত্বের ধূসরতায় নিমগ্ন হলেন।
১৬/১১/৯৫