আজকাল ঘরেই বেশি থাকি; নিঃসঙ্গতার
শুড় যখন আমার গা বুলোয় মনোনীতার
স্পর্শের মতো,
দারুণ উপভোগ করি, দু’চোখ বুজে আসে।
কখনো চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই,
বুক শেল্ফ থেকে তুলে নিই না-পড়া
কোনো বই, পাতা ওল্টাই, চোখ বুলোই, চাখি
একটি কি দু’টি পাতা; কখনো রেলিং-এ বসা প্রজাপতিকে
দেখি, চোখ জুড়োয় কখনো
শিল্পপল্লীর খয়েরি দালানের কার্ণিশে
ঠাঁই নেওয়া পায়রা যুগলের প্রণয় দৃশ্যটিকে
ধরে রাখি স্মৃতিতে। মনে পড়ে, টেলিফোনের
তারে ভেসে আসা কারো মধুর কণ্ঠস্বর, চকিতে
নতুন পড়া কোনো কবিতা
আমার ইন্দ্রিয়সমূহকে সম্মোহিত করে এবং
এর চেয়ে তৃপ্তিকর আর কী-ইবা হতে পারে?
এই ছায়াচ্ছন্ন নিঃসঙ্গতা আমার প্রয়োজন,
অথচ বাইরের রৌদ্রের চুম্বন, হঠাৎ
বৃষ্টির ছাঁট, বই মেলার সায়াহ্ন ছোঁয়া শব্দের
স্পন্দন আর কবিদের আড্ডা ছাড়াও
আমার চলে না। আকাশের নিঃসীম
শূন্যতার পাশাপাশি নক্ষত্রের মহফিল এবং
অপ্সরার ভুরুর মতো চাঁদ
আমার বড় দরকার। কেবল কোকিল দোয়েল
হলেই আমার সাধ মেটে না; শালিক, চড়ুই,
ফিঙে, ডাহুক, এমনকি কাদাখোঁচা আর দাঁড়কাকও চাই।
গোলাপ যে দেয় তার কাছ থেকে কখনো
সখনো গাঁদা কিংবা বনফুলও পেতে ইচ্ছে করে
এই সাত কাহন শুনে
তোমরা আমাকে কী আখ্যা দেবে, জানি না;
এই যে খাতার পাতায় জখমি সৈনিকের মতো
অসহায় ছড়ানো টুকরো টুকরো
কিছুউ স্তবক, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপবান
না হওয়া অব্দি শান্তি নেই আমার।
ভগ্নাংশ নিয়ে আমার তৃপ্তি নেই,
পূর্ণতাই কাম্য এই অভাজনের।
অসুখ বিসুখ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া-আসা চলবে
মাঝে-মাঝে, দীর্ঘ জীবন পেলে শোকের সঙ্গে
মুখ দেখাদেখি হবে অনেকবার। পথ
যত পাথরকীর্ণ আর কন্টকসংকুলই কোহ
আনন্দ সরোবরে বারবার সাঁতার কেটে বেঁচে থাকার
আজাঙ্ক্ষা জীইয়ে রাখব, এই আমার সাধনা।