ঋগ্বেদ ১০।১২৯

ঋগ্বেদ ১০।১২৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১২৯
পরমাত্মা দেবতা। প্রজাপতি ঋষি(১)।

১। তৎকালে যাহা নাই, তাহাও ছিল না, যাহা আছে, তাহাও ছিল না। পৃথিবীও ছিল না, অতি দুরবিস্তার আকাশও ছিল না। আবরণ করে এমন কিছিল? কোথায় কাহার স্থান ছিল? দুর্গম ও গম্ভীর জল কি তখন ছিল?।

২। তখন মৃত্যুও ছিল না, অমরত্বও ছিল না, রাত্রি ও দিনের প্রভেদ ছিল না। কেবল সেই একমাত্র বস্তু বায়ুর সহকারিতা ব্যতিরেকে আত্মা মাত্র অবলম্বনে নিশ্বাসপ্রশ্বাসযুক্ত হইয়া জীবিত ছিলেন। তিনি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না (২)।

৩। সর্ব প্রথমে অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল। সমস্তই চিহ্ন বর্জিত ও চতুর্দিকে জলময় ছিল(৩)। অবিদ্যমান বস্তু দ্বারা সেই সৰ্বব্যাপী আচ্ছন্ন ছিলেন। তপস্যার প্রভাবে সেই এক বস্তু জন্মিলেন।

৪। সর্ব প্রথমে মনের উপর কামের আবির্ভাব হইল, তাহা হইতে সৰ্ব্ব প্রথম উৎপত্তির কারণ নির্গত হইল। বুদ্ধিমাগণ বুদ্ধি দ্বারা আপন হৃদয়েপৰ্যালোচনাপূর্বক বিদ্যমান বস্তুতে বিদ্যমান বস্তুর উৎপত্তি স্থান নিরূপণ করিলেন।

৫। রেতোধা পুরুষেরা উদ্ভব হইলেন, মহিমা সকল উদ্ভব হইলেন। উহাদিগের রশ্মি(৪) দুই পার্শ্বে ও নিম্নের দিকে এবং উর্ধ দিকে বিস্তারিত হইল, নিম্ন দিকে স্বধা রহিল, প্রয়তি উর্ধদিকে রহিলেন (৫)।

৬। কেই বা প্রকৃত জানে? কেই বা বর্ণনা করিবে? কোথা হইতে জন্মিল? কোথা হইতে এই সকল নানা সৃষ্টি হইল? দেবতারা এই সমস্ত নানা সৃষ্টির পর হইয়াছেন। কোথা হইতে যে হইল, তাহা কেই বা জানে?

৭। এই নানা সৃষ্টি যে কোথা হইতে হইল, কাহা হইতে হইল, কেহ সৃষ্টি করিয়াছেন, কি করেন নাই, তাহা তিনিই জানেন, যিনি ইহার প্রভুস্বরূপ পরমধামে আছেন! অথবা তিনিও না জানিতে পারেন।

————

(১) ঋগ্বেদে দশম মন্ডলের মধ্যে এই সূক্তটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক সূক্ত। এটি অতি প্রসিদ্ধ ও জ্ঞাতব্য, কেন না সৃষ্টির আদি কারণ ও প্রণালীর কথা ইহাতে পৰ্যালোচনা করা হইয়াছে। ঋগ্বেদ রচনার শেষ সময়ে সৃষ্টিসম্বন্ধে ঋষিগণ যেরূপ মত বিশ্বাস করিতেন, তাহা এই প্রসিদ্ধ সূক্তে দৃষ্ট হয়।

(২) সৃষ্টির পূর্বে পরমাত্মার অনুভব।

(৩) সৃষ্টির পূর্বের অবস্থার এই বর্ণনা অতিশয় গভীর ও ভয়াবহ।

(৪) “Professor Aufrecht has suggested to me that the word Rasmi may have here the sense of thread or cord, and not of ray.”—Muir’s Sanscrit Texts (1884), vol. V, p. 357, note.

(৫) সায়ণ কহেন মহিমা বলিতে পঞ্চভূত, আর স্বধা অর্থে অন্ন এবং অন্ন নিকৃষ্ট এবং প্রয়তি অর্থে ভোক্তা পুরুষ, সেই ভোক্তা জীব উপরে অর্থাৎ প্রধান। A self-supportingprinciple beneath, and energy aloft.”-Muir.

(৬) প্রকৃতির যে কার্য্যসমূহ ও সৌন্দর্য্যকে ঋষিগণ এতদিন দেব বলিয়া পূজা করিয়া আসিতে ছিলেন, তাঁহারা আদি দেব নহেন, তাঁহারাও সৃষ্ট অর্থাৎ কার্য্য মাত্র, তাহা এক্ষণে ঋষির মনে উদয় হইল। তবে কারণ কে? আদি কে? এই সূক্ত সেই প্রশ্নেরই উত্তর। এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মনুষ্যের সাধ্য নহে, ঋষিরও সাধ্য নহে, ঋষি তাহা এই ঋকে স্বীকার করিতেছেন।