ঋগ্বেদ ১০।১২৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১২৫
পরমাত্মা দেবতা। বাক ঋষি।
১। (বাগদেবীর উক্তি) -আমি রুদ্রগণ ও বসুগণের সঙ্গে বিচরণ করি, আমি আদিত্যদিগের সঙ্গে এবং তাবৎ দেবতাদিগের সঙ্গে থাকি, আমি মিত্র ও বরুণ এই উভয়কে ধারণ করি, আমিই ইন্দ্র ও অগ্নি এবং দুই অশ্বিদ্বয়কে অবলম্বন করি।
২। যে সোম আঘাত, অর্থাৎ প্রস্তর নিষ্পীড়ন দ্বারা উৎপন্ন হয়েন, আমিই তাহাকে ধারণ করি, আমি ত্বষ্টা ও পূষা ও ভগকে ধারণ করি, যে যজমান যজ্ঞসামগ্রী আয়োজনপূর্বক এবং সোমরস প্রস্তুত করিয়া দেবতাদিগকে উত্তমরূপে সন্তুষ্ট করে, আমিই তাহাকে ধন দান করি।
৩। আমি রাজ্যের অধীশ্বরী, ধন উপস্থিত করিয়াছি, জ্ঞানসম্পন্ন এবং যজ্ঞোপযোগী বস্তু সকলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এতাদৃশ আমাকে, দেবতারা নানা স্থানে সন্নিবেশিত করিয়াছেন, আমার আশ্রয়স্থান বিস্তর, আমি বিস্তর প্রাণীর মধ্যে আবিষ্ট আছি।
৪। যিনি দর্শন করেন, প্রাণধারণ করেন, কথা শ্রবণ করেন, অথবা অন্ন ভোজন করেন, তিনি আমার সহায় তাতে সেই সকল কার্য্য করেন। আমাকে যাহারা মানে না, তাহারা ক্ষয় হইয়া যায়। হে বিদ্বান্! শ্রবণ কর, আমি যাহা কহিতেছি, তাহা শ্রদ্ধার যোগ্য।
৫। দেবতারা এবং মনুষ্যরা যাঁহার শরণাগত হয়, তাহার বিষয় আমিই উপদেশ দিই। যাহাকে ইচ্ছা, আমি বলবান, অথবা স্তোতা, অথবা ঋষি, অথবা বুদ্ধিমান করিতে পারি।
৬। রুদ্র যখন স্তোত্রদ্বেষী শত্রুকে বধ করিতে উদ্যত হয়েন, তখন আমিই তাঁহার ধনু বিস্তার করিয়া দিই। লোকের জন্য আমিই যুদ্ধ করি। আমি দ্যুলোকে ও ভূলোকে আবিষ্ট হইয়া আছি।
৭। আমি পিতা, আকাশকে প্রসব করিয়াছি। সেই আকাশ এই জগতের মন্তকরূপ। সমুদ্রে জলের মধ্যে আমার স্থান। সেই স্থান হইতে সকল ভুবনে বিস্তারিত হই, আপনার উন্নত দেহদ্বারা এই দ্যুলোককে আমি স্পর্শ করি।
৮। আমিই তাবৎ ভুবন নির্মাণ করিতে করিতে বায়ুর ন্যায় বহমান হই। আমার মহিমা এতাদৃশ বৃহৎ হইয়াছে যে, দ্যুলোককেও অতিক্রম করিয়াছে, পৃথিবীকেও অতিক্রম করিয়াছে (১)।
————
(১) বাগদেবীকে এই সুক্তের বক্তা, অর্থাৎ ঋষি বলিয়া নির্দেশ করা হইয়াছে। কিন্তু বাক যে এই সুক্তের বক্তা, সূক্তের ভিতর তাহার কোনও নিদর্শন নাই। বক্তা আপনাকে সর্বনিয়ন্তা সর্বনির্মাতা বলিয়া পরিচয় দিয়েছেন।