ঋগ্বেদ ১০।১২৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১২৪
অগ্নি, প্রভৃতি দেবতা। তাঁহারাই ঋষি।
১। হে অগ্নি! আমাদিগের এই যে যজ্ঞ, যাহার ঋত্বিক, যজমান প্রভৃতি পাঁচ ব্যাক্তি নিয়ামক অর্থাৎ অধ্যক্ষ আছেন, যাঁহার অনুষ্ঠান তিন প্রকারে হইয়া থাকে, যাহার সাত জন অনুষ্ঠানকর্তা আছেন, সেই যজ্ঞের দিকে তুমি আগমন কর। তুমিই আমাদিগের হবির্বহনকারী ও অগ্রগামী দূতস্বরূপ। তুমি চিরকালই গাঢ় অন্ধকার মধ্যে শয়ন করিয়া থাক।
২। (অগ্নির উক্তি)-দেবতারা আমাকে প্রার্থনা করেন, সেই নিমিত্ত আমি দীপ্তিহীন অদর্শনের অবস্থা হইতে দীপ্তিশালী অবস্থা প্রাপ্ত হইয়া চতুর্দিক নিরীক্ষণ করতঃ অমরত্ব লাভ করি। যখন যজ্ঞ নিরুপদ্রবে সম্পন্ন হয়, তখন আমি অদর্শন হইয়া যজ্ঞকে পরিত্যাগ করিয়া যাই। চিরকালের বন্ধুত্বপ্রযুক্ত নিজ উৎপত্তিস্থান অরণির মধ্যেই গমন করি।
৩। পৃথিবী ভিন্ন আর এক যে গমন পথ আছে, অর্থাৎ আকাশ, তথাকার যিনি অতিথি, অর্থাৎ সূৰ্য্য, আমি তাঁহার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া, অর্থাৎ তাহার বার্ষিক গতি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে নানা ষজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়া থাকি। অসুর দেবগণ পিতাস্বরূপ, তাহাদিগের সুখোদ্দেশে আমি স্তব উচ্চারণ করিয়া থাকি। যজ্ঞের অযোগ্য অপবিত্র স্থান হইতে আমি যজ্ঞের উপযুক্ত স্থানে গমন করি।
৪। ঐ যজ্ঞস্থানে আমি অনেক বৎসর ক্ষেপণ, করিয়াছি। তথায় ইন্দ্রকে বরণ করতঃ আপন পিতা অরণিকে ত্যাগ করি অর্থাৎ অরণি হইতে নির্গত হই। আমি অদর্শন হওয়াতে অগ্নি ও সোম ও বরুণের পতন হইল, রাজা বিপৰ্যস্ত হইল, তখন আসিয়া আমি রক্ষা করি।
৫। আমি আসিলে সেই অসুরগণ শক্তিহীন হইয়া গেল। হে বরুণ! তুমিও আমাকে প্রার্থনা কর। অতএব হে প্রভু! সত্য হইতে মিথ্যাকে পৃথক করিয়াআমার রাজত্বের আধিপত্য গ্রহণ কর।
৬। (অগ্নি বা বরুণের উক্তি) -হে সোম! এই দেখ স্বর্গ। ইহা অতি সুন্দর ছিল। এই দেখ আলোক। এই বিস্তীণ আকাশ। হে সোম! তুমি নির্গত হও, বৃত্রকে বধ করা যাউক। তুমি নিজে হোমের দ্রব্য, অন্যান্য হোমের দ্রব্যদ্বারা তোমাকে পূজা করি।
৭। ক্রিয়াকুশল মিত্রবেদ, ক্রিয়াকৌশলের দ্বারা আকাশে নিজ তেজ সংলগ্ন করিলেন। বরুণদেব অবলীলাক্রমে জল সৃষ্টি করিলেন। সেই সমস্ত জল নদীরূপ ধারণ করিয়া জগতের মঙ্গল বিধান করিতেছেন। সেই সকল নিৰ্ম্মল নদী বরুণের পত্নীর ন্যায় বরুণের শুভ্র উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করিতেছে।
৮। সেই সকল জলদেবতা বরুণের সব্বশ্রেষ্ঠ তেজঃ প্রাপ্ত হইতেছে, তাহার ন্যায় হোম দ্রব্য পাইয়া আনন্দিত হইতেছে। বরুণ নিজ পত্নীর ন্যায়তাহাদিগের নিকট গমন করিতেছেন যেরূপ প্রজাবর্গ ভয় পাইয়া রাজাকে আশ্রয় করে, তদ্রূপ জলেরা ভয়প্রযুক্ত বরুণকে আশ্রয় করিয়া বৃত্রের নিকট হইতে পলায়ন করিতেছে।
৯। সেই সকল ভীত দিব্য জলের সঙ্গী হইয়া যিনি তাহাদিগের বন্ধুত্ব আচরণ করেন, তাহাকে হংস কহে। তিনি স্তবের যোগ্য, তিনি জলের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ভ্রমণ করেন। বিদ্বানগণ বুদ্ধিবলে তাহাকে ইন্দ্র বলিয়া স্থির করিয়াছেন।