ঋগ্বেদ ১০।১১৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ১১৭
দান দেবতা। ভিক্ষু ঋষি(১)।
১। দেবতারা যে ক্ষুধার সৃষ্টি করিয়াছেন, সেই ক্ষুধা প্রাণনাশিনী। আহার করিলেও মৃত্যুর নিকট অব্যাহতি নাই। কিন্তু দাতার ধন হ্রাস হয় না। অদাতাকে কেহই সুখী করে না।
২। যখন কোন ক্ষুধাতুর ব্যক্তি যাচ্ঞা রব করিতে করিতে উপস্থিত হয় এবং অন্ন ভিক্ষা করে, তখন যে অন্নবান হইয়াও হৃদয় কঠিন করিয়া রাখে এবং অগ্রে নিজে ভোজন করে, তাহাকে কেহ কখন সুখী করে না।
৩। কোন কৃশ ব্যক্তি অন্নলোভে আসিয়া ভিক্ষা করিলে, যিনি অন্ন দান করেন, তিনি ভোজ, অর্থাৎ দাতা। তাঁহার সম্পূর্ণ যজ্ঞফল লাভ হয়, শক্তগণের মধ্যে তিনি মিত্র লাভ করেন।
৪। এক সঙ্গের সঙ্গী যদি নিকটে আসেন, তবে যে ব্যক্তি বন্ধু হইয়া তাঁহাকে অন্ন দান না করে, সে বন্ধুই নয়। তাহার নিকট হইতে চলিয়া যাওয়াই উচিত। তাহার গৃহ গৃহই নয়। তখন উচিত, অন্য কোন ধনাঢ্য দাতা ব্যক্তির নিকট গমন করা।
৫। বাচককে অবশ্য ধন দান করিবে। সেই দাতাব্যক্তি অতি দীর্ঘ পথ প্রাপ্ত হয়। রথের চক্র যেমন উৰ্দ্ধাধোভাবে ঘূর্ণিত হয়, তদ্রূপ ধন কখন এক ব্যক্তির নিকট, কখন অপর ব্যক্তির নিকট গমণ করে, অর্থাৎ এক স্থানে চির কাল থাকে না।
৬। যাহার মন উদার নহে, তাহার মিথ্যা ভোজন করা। বলিতে কি, তাহার ভোজন তাহার মৃত্যু স্বরূপ। সে দেবতাকেও দেয় না, বন্ধুকেও দেয় না। যে কেবল নিজে ভোজন করে, তাহার কেবল পাপই ভোজন করা হয়।
৭। লাঙ্গল কৃষিকাৰ্য্য করিয়া অন্ন প্রস্তুত করে, সে আপন পথে গমন করিয়া আপনার ক্রিয়ায় শস্য উৎপাদন করে। পুরোহিত যদি বিদ্বান হয়, তবে সে মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তদ্রূপ দাতাব্যক্তি অদাতার উপরিবর্তী।
৮। যাহার এক অংশমাত্র সম্পত্তি থাকে, সে দুই অংশ সম্পত্তির অধিকারীকে উপাসনা করে, যাহার দুই অংশ আছে, সে তিন অংশ বিশিষ্টের পশ্চাতবর্তী হয়। চতুরংশবান আবার উহাদিগের উপরে স্থান গ্রহণ করেন। এইরূপ অগ্র পশ্চাদভাবে শ্রেণীবদ্ধ আছে। অল্প ধনী অধিক ধনীর উপাসনা করে।
৯। আমাদিগের দুইহস্ত পরস্পর সমানাকৃতি বটে, কিন্তু ধারণক্ষমতা সমান নহে। দুটী গাভী একমাতার উদরে জন্মগ্রহণ করিলেও, সমান দুগ্ধ দেয় না। দুই ব্যক্তি যমক ভ্রাতা হইলেও উহাদিগের পরাক্রম সমান হয় না। দুই জনে এক বংশের সন্তান হইয়াও সমান দাতা হয় না।
————
(১) এই সূক্তটি দান সম্বন্ধে। ইহাতে কতকগুলি ঋক বড় হৃদয়গ্রাহী।